রশিদ খানের জাদুকরী বোলিংয়ে দেড়শর আগে ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়েছেন মোসাদ্দেক-তাইজুল। দলকে ফলোঅনের শঙ্কা থেকে বাঁচিয়েছেন। সঙ্গে নিজেরা উইকেটে থেকে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছেন।
মোসাদ্দেক ৭৪ বলে ৪৪ ও তাইজুল ৫৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত আছেন। এই জুটির দিকেই এখন তাকিয়ে স্বাগতিকরা। রশিদ ৪৭ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৯৪ রান। আফগানদের প্রথম ইনিংস থেকে সাকিব আল হাসানের দল পিছিয়ে ১৪৮ রানে।
এদিকে ইনিংসের শুরুতে স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ করার আগেই ওপেনার সাদমান ইসলামকে ফিরিয়ে দেন আফগান পেসার ইয়ামিন আহমদজাই। এরপর আফগান বোলারদের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মনে হচ্ছিল এক একটি যম। শুধু ব্যাট নয়, পুরো শরীর দিয়ে বাঁচাতে হচ্ছে আফগান বোলারদের কাছ থেকে ছুটে আসা বলগুলো। এর মধ্যে এলবিডব্লিউর চান্সও থেকে যায়।
সেই এলবিডব্লিউর শিকারই হলেন সৌম্য সরকার। সাদমানের বিদায়ের পর জুটি বেঁধে বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন সৌম্য আর লিটন কুমার দাস। ওয়ানডাউনে লিটনকে মাঠে নামানো ছিল হয়তো একটি বিশেষ পরিকল্পনার অংশ।
৩৮ রানের জুটি গড়ে এ দু’জন অনেকটাই সাবলীল হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ভুলটা করে বসলেন সৌম্য। মোহাম্মদ নবীর সোজা লেন্থ বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে গেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ৬৬ বলে ১৭ রান করে বিদায় তিনি।
সৌম্য বিদায় নেওয়ার পর মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটি বাঁধার চেষ্টা করছিলেন লিটন দাস। কিন্তু দলীয় ৫৪ রানের মাথায় রশিদ খানের ঘূর্ণি বলে পুল করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু বল উঠলো না এবং সোজা গিয়ে আঘাত হানলো স্ট্যাম্পে। বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি ব্যক্তিগত ৩৩ রানে।
দীর্ঘদিন পর টেস্ট খেলতে নেমে সাকিব আল হাসান শুরুটা করেছিলেন ভালোই। দেখেশুনে ১১ রান পর্যন্ত গেলেন, তারপর রশিদ খানের বল আটকে দিতে গিয়ে মিডল স্ট্যাম্পের বলটা প্যাডে লাগিয়ে বসলেন। হলেন এলবিডব্লিউ। এক বল পর দলের ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহীমকেও সাজঘরের পথ দেখালেন রশিদ।
রশিদের ঘূর্ণিতে এরপর পর্যদুস্ত মাহমুদউল্লাহও। ৭ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের এই আসা যাওয়ার মাঝেও একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন মুমিনুল হক। দেখেশুনে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন।
কিন্তু সেই হাফসেঞ্চুরির পর আর উইকেটে থাকা হয়নি মুমিনুলের। মোহাম্মদ নবীর ডেলিভারিটি স্লটে পেয়ে মারার মতোই মনে করেছিলেন এই লিটলম্যান। কিন্তু সেটা তেমন ছিল না। কিছুটা নিচু হয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ দেন ৭১ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৫২ রান করা মুমিনুল। ১৩০ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফলোঅনের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।
অষ্টম উইকেট জুটিতে সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও এই জুটিতে উঠে মাত্র ১৬ রান, তবে উইকেটে প্রায় দশ ওভারের মতো সময় কাটিয়েছেন তারা। জুটিটি ভাঙে মিরাজের অতি আত্মবিশ্বাসে। কায়েস আহমেদের লেগ সাইডে পড়া বলটি সুইপ করতে গিয়ে পেছন দিকের স্ট্যাম্প হারান মিরাজ (১১)।
নবম উইকেটে তাইজুলকে নিয়ে আবারও শক্ত প্রতিরোধ মোসাদ্দেকের। এই জুটি দ্বিতীয় দিনশেষে এখন পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ৪৮ রানে। মোসাদ্দেক ৪৪ আর তাইজুল ১৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নামবেন।
এর আগে প্রথম ইনিংসে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৪২ রানের বড় স্কোর গড়ে আফগানরা। টস জিতে প্রথম দিন ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের ভালোই ভুগিয়েছেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। আফগানিস্তানের হয়ে রহমত শাহ টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। তার সেঞ্চুরি এবং ৮৮ রানে থাকা আসগর আফগানের ব্যাটে ভর করে প্রথম দিন শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান।
দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে দ্রুত বাকি ৫ উইকেট হারালেও ৩৪২ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় আফগানরা। ১০২ রান করে আউট হন রহমত শাহ। ৯২ রান করেন আসগর আফগান এবং শেষ মুহূর্তে ঝড়ো হাফসেঞ্চুরি করেন রশিদ খানও।
তাইজুল ইসলাম নেন ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন নাইম হাসান এবং সাকিব আল হাসান। ১টি করে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
জয়নিউজ/এসআই
