যে দলই জিতুক, রচিত হবে ইতিহাস। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট। জয় থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরুত্বে টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম দল আফগানিস্তান। এদিকে বাংলাদেশকে জিততে হলে গড়তে হবে নতুন এক ইতিহাস। কেননা বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ তুলেছিল ৪১৩ রান। বাংলাদেশের মাটিতে এটি চতুর্থ ইনিংসে যেকোনো দলের সর্বোচ্চ রান করারও রেকর্ড। তাও এক যুগ আগে ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে।
সে ম্যাচে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৫২১ রান তাড়া করে হেরেছিল স্বাগতিকরা। আর ঘরের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ১০১ রান তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ, তাও ২০১৪ ঢাকা টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সে ম্যাচে অবশ্য জিম্বাবুয়ে জয়ের জন্য ১০১ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি। দুই দিন হাতে রেখে ম্যাচটি জিতেছিল স্বাগতিকরা।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পরিসংখ্যান বলছে, এ মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৩১ রান তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। এটি যেকোনো দলের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সে টেস্টে ৫১৩ রান তাড়া করতে নেমে হেরেছিল বাংলাদেশ। আর এ মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩১৭ রান তাড়া করে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। এটি বাংলাদেশের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে যেকোনো দলের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও।
এদিকে তৃতীয় দিন শেষেই ৩৭৪ রানের লিড পেয়েছে আফগানিস্তান। অর্থাৎ জিততে হলে ঘরের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার নজিরই গড়তে হবে সাকিবদের। আর আফগানিস্তান জিতলেও তারা গড়বে ইতিহাস।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে প্রথম ওভার করতে এসে জোড়া আঘাত হেনেছিলেন সাকিব। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বোলিংয়ের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি টাইগাররা। দলীয় ২৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো আফগানদের উদ্ধার করেছে ইব্রাহিম জাদরান ও আসগর আফগানের ব্যাট।
অবশেষে জাদরান-আফগানের ১০৮ রানের সেই জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফগান (৫০)। এরপর সেঞ্চুরি থেকে ১৩ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন ইব্রাহিম জাদরান। এর আগে হাসমতউল্লাহ শহীদিকেও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নাঈম। প্রথম ইনিংসে শুন্য রানেই বিদায় নেওয়া নবীকে (৮) বিদায় করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
প্রথম ইনিংসে ঝড় তুলেছিলেন রশিদ খান (৬১ বলে ৫১ রান)। দ্বিতীয় ইনিংসেও এমন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তবে এবার তার ইনিংস ২৪ রানেই থামিয়ে দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। অবশ্য তাইজুলের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ঠিকই মাত্র ২২ বল খেলে ৬টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন আফগান অধিনায়ক। অর্থাৎ ইনিংসটি পুরোটাই বাউন্ডারি দিয়ে সাজিয়েছেন তিনি। পরে কাইস আহমেদকে (১৪) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছেন সাকিব।
দিনশেষে বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে আছেন আফসার জাজাই। ৩৪ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন এই আফগান উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
এর আগে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আসা নাঈম হাসানের কল্যাণে প্রথম ইনিংসে দুইশ’ পেরোনো সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। কিন্তু রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়ে তিনি ফিরলে ২০৫ রানেই থেমে যায় টাইগাররা।
তৃতীয় দিনের শুরুতে মোহাম্মদ নবীর তৃতীয় বলে বোল্ড হোন তাইজুল ইসলাম। আগের দিনের ১৪ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। তবে সঙ্গী না পাওয়ায় ফিফটি হয়নি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। অপরাজিত ৪৮ রান নিয়ে ফিরতে হয় তাকে।
সফরকারী আফগানিস্তান প্রথম ইনিংসে করে ৩৪২ রান।