নগরবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হতে যাচ্ছে। নগরপিতা ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাত ধরে চট্টগ্রামেই নির্মিত হয়েছে আন্তর্জাতিকমানের সুইমিংপুল। যাতে ব্যয় করা হয়েছে সাড়ে ১১ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় সুইমিংপুলটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। বিশেষ অতিথি থাকবেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। উদ্বোধনের পরেই সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে সুইমিংপুল।
সিজেকেএস সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষানবিশ (সাঁতার না জানা) ক্যাটাগরিতে ছেলে-মেয়েদের ১ মাসের কোর্সে ভর্তি ফি ৩ হাজার টাকা। ১ ঘণ্টার ক্লাস হবে সপ্তাহে ৪ দিন। মাসের যেকোনো দিন ভর্তি হওয়া যাবে। প্রতি ব্যাচে সর্বোচ্চ ৩০ জন সাঁতারু অংশ নিতে পারবে।
বিভিন্ন ইভেন্টের জাতীয় দল ও চট্টগ্রাম জেলা দলের সাঁতারুরা সপ্তাহে ৪ দিন দৈনিক এক ঘণ্টা সাঁতার কাটতে পারবেন। জনপ্রতি প্রতিঘণ্টা ২০০ টাকা।
আরও পড়ুন: যাত্রা শুরু করল স্বপ্নের সুইমিংপুল, মেয়রের উদ্বোধন
সাঁতার জানা শৌখিন সাঁতারুদের প্রতি ঘণ্টা ৪০০ টাকা, এককালীন মাসিক মেম্বারশিপ ৮ হাজার টাকা, ছয় মাসের মেম্বারশিপ ২০ হাজার টাকা। সপ্তাহে ৪ দিন সাঁতার কাটতে পারবেন তারা। এছাড়া নাটক, সিনেমা, শর্টফিল্মের শ্যুটিংয়ের জন্য প্রতিঘণ্টায় দিতে হবে ১০ হাজার টাকা।
সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পুরুষরা, বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নারীরা, এরপর এক ঘণ্টা করে পুরুষ, ছেলে ও মেয়ে এবং রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত শুধু পুরুষরা (যারা সাঁতার জানে) সুইমিং পুলটি ব্যবহার করতে পারবেন।
সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সুইমিং কমপ্লেক্সটিকে ২ জন নারী প্রশিক্ষক, ২ জন পুরুষ প্রশিক্ষকসহ ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা সাঁতার জানে না তাদের জন্য বিভিন্ন কোর্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। নারী ও পুরুষদের সাঁতার শেখার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছি আমরা। এটি সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, এর আয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
নগরপিতা আরও বলেন, বছর দেড়েক আগেও নগরের আউটার স্টেডিয়ামের পাশের এই এলাকাটি জঞ্জালে ভরা ছিল। মাদকাসক্ত, ভবঘুরে আর ভাসমানদের দখলে থাকা আউটার স্টেডিয়ামের দক্ষিণাংশ ছিল অপরাধের আঁখড়া। রাত হলেই এলাকা দিয়ে হেঁটে যেতে ভয় পেত মানুষ। আর এখন সে এলাকাটি আলো ঝলমলে এক দর্শনীয় স্থান। এ সুইমিংপুলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে অনেক আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু বের হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন নগরপিতা।
বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য আসলাম মোর্শেদ জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে এতদিন একটি মানসম্পন্ন সুইমিং পুলের অভাব ছিল। এর অভাবে এ অঞ্চলের সাঁতারুরা পিছিয়ে পড়ছিল। সুইমিং পুল তৈরির ফলে সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি চট্টগ্রামে সাঁতারের বিভিন্ন ইভেন্টও এখন জনপ্রিয় হবে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে ১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সুইমিংপুলটি। নগরের আউটার স্টেডিয়ামের পাশে নির্মিত এই সুইমিং কমপ্লেক্সে পুলের আয়তন ১হাজার ১০০ বর্গ মিটার। যার দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার ও প্রস্থ ২২ মিটার। রয়েছে ৮টি লেন। প্রায় ২০ লাখ লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পুলের গড় গভীরতা ২ মিটার। আন্তর্জাতিকমানের পুলটির মূল প্রবেশ পথ পূর্ব দিকে। যার পূর্ব ও পশ্চিম দুই পাশে রয়েছে গ্যালারি। যেখানে বসতে পারবে দেড় হাজার দর্শক। নিচে রয়েছে ডিপ টিউবওয়েল, ফিল্টেশন প্ল্যান্ট এবং ২৫০ কেভি সাবস্টেশন।
এছাড়া পশ্চিম পাশে রয়েছে ওয়াটার রিজার্ভার। সুইমিংপুলের পানি প্রসেসিং সিস্টেমে রয়েছে- ডিপ টিউবওয়েল থেকে প্রথমে পানি যাবে রিজার্ভারে, এরপর ফিল্টেশন প্ল্যান্ট হয়ে বিশুদ্ধ পানি যাবে সুইমিংপুলে।
পুল থেকে আবার ওভারফ্লো হয়ে ড্রেনের মাধ্যমে সে পানি যাবে বেনচিং ট্যাংকে। পরে সে পানি আবার রিসাইক্লিং হয়ে যাবে পুলে। পুলের পশ্চিম পাশে রয়েছে ড্রেসিং রুম, অফিস কক্ষ এবং টয়লেট ব্লক। সবমিলিয়ে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এই সুইমিংপুল।