শারীরিক নির্যাতন, থাকার-খাওয়া এবং বেতন না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে গত আট মাসে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন ৯ শতাধিক নারী কর্মী।
একটু সুখের আশায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবাননসহ বিশ্বের ১৮টি দেশে গৃহকর্মী হিসেবে যাচ্ছেন বাংলাদেশি নারীরা। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে প্রতি মাসেই নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরছেন। দেশটির বাসা বাড়িতেই শুধু নয়, পরে তাদের দেশটির মক্তবে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানেও তারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। দীর্ঘদিন দূতাবাসের সেফহোম রাখার পর তারপর নারীদের দেশে পাঠানো হয়। সেই সেফহোমও তাদের কাছে অনেক সময় নিরাপদ হয়ে উঠে না। যার প্রমাণও মিলেছে বিভিন্ন সময়।
নির্যাতিত এসব নারী বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলেও তারা তা আমলে নেয়নি। ফলে প্রতি মাসেই নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরা নারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
প্রবাস কল্যাণ ডেস্ক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসের পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ২৫ হাজার ২৯৩ জন কর্মী দেশে ফিরেছে। এর মধ্যে নারী কর্মী রয়েছে ৯৩২ জন। যার বেশির ভাগ সৌদি আরব থেকে নির্যাতনসহ নানা কারণে ফেরত এসেছে।
গত আট মাসে দেশে ফেরা নারীর কর্মীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেরত আসা নারী কর্মীদের অনেক পরিবার তাদের গ্রহণ করছে না। আবার অনেকের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গেছে। তাদের অনেকে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। এসব নারীদের পেছনে চিকিৎসা করতে গিয়েও পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। মূলত ফেরত আসা নারী কর্মীদের একটা বড় অংশ চলে আসেন বেতন ভাতা এবং ঠিকমতো খাবার খেতে দেওয়া হয় না বলে। একইসঙ্গে শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি তো রয়েছেই। কেউ বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আবার কেউ বেতন চাইতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে দেশটির মক্তবে (রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস) গেলেও কোনো প্রতিকার পায় নি। উল্টো তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আবার কখনো পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার ৯৮৩ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী গেছে সৌদি আরবে। দেশটিতে গত আট মাসে ৪৪ হাজার ২ জন নারী কর্মী গেছে। এরপর রয়েছে জর্ডান সেখানে গেছে ১১ হাজার ৫৭ জন। এরপর ওমান। সেখানে গেছে ৭ হাজার ২৫৩ জন। কাতারে ২ হাজার ৩২৮, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক হাজার ৫৮৭ জন। এরপর লেবাননে গত আট মাসে নারী কর্মী গেছেন এক হাজর ৩৪ জন।