চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে গিয়ে কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশ আহমেদের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন তার সাবেক স্ত্রী অভিনেত্রী শামসুন নাহার শিমলা।
তিনি জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে পলাশ ট্রানজিটের অজুহাতে মুম্বাইতে শিমলার কাছে ছিলেন। এসময় পলাশ শিমলাকে বলেছিলেন, মুম্বাই ঘুরে ফ্লাইট লন্ডন যাচ্ছে, ট্রানজিটের ফাঁকে তিনি শিমলাকে দেখতে এসেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট শিমলাকে ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। শিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া।
জিজ্ঞাসাবাদে শিমলা জানান, আর্থিক ও পারিবারিক বিষয়ে পলাশের দেওয়া বেশকিছু তথ্য বিশ্বাস করে শিমলা তাকে বিয়ে করেছিলেন, যা পরে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়। প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে শিমলা তাকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে পলাশ অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেন। এমনকি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিনয়ও করেন পলাশ। বিচ্ছেদের আগে-পরে তিনি মানসিকভাবে বির্পযস্ত ছিল। বারবার চেষ্টা করেও বিচ্ছেদ ঠেকাতে না পেরে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে পলাশ বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার মতো ঘটনায় জড়িয়েছিলেন বলে ধারণা শিমলার।
পরিচয়ের পর থেকে বিয়ে পর্যন্ত পলাশ ও শিমলা বিভিন্ন স্থানে দেখা-সাক্ষাৎ করেন এবং বেড়াতে যান। এসময় পলাশ শিমলাকে জানান, তার বাবা লন্ডনের বড় ব্যবসায়ী। তাদের পুরো পরিবার লন্ডনে থাকে। পলাশ নিজেও ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী নাগরিক। ঢাকার উত্তরায় তাদের বাড়ি আছে। নারায়ণগঞ্জেও তাদের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি আছে। তবে বিয়ের পর এসব তথ্য মিথ্যা বলে জানতে পারেন শিমলা।
দু’জনের পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ের পর শিমলাকে নিয়ে পলাশ বনানীর একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। এসময় শিমলা নারায়ণগঞ্জে পলাশের বাড়িতে যেতে চাইলেও পলাশ তাকে বাড়ি নিয়ে যাননি। এর আগে পলাশ বারবার শিমলাকে ডেকে চাপ দিতে থাকেন যেন সাংবাদিকদের ডেকে বিয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ঘোষণা আর দেওয়া হয়নি।
সূত্রমতে, শিমলা বিয়ের আগে থেকেই ভারতের মুম্বাইয়ে আসা-যাওয়া করতেন। বিয়ের ১৫ দিন পর তিনি শুটিংয়ের কাজে মুম্বাই যান। পলাশ তাকে জানান, তিনিও লন্ডনে চলে যাবেন। শিমলা তাকে বনানীর বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও পলাশ রাজি হননি। মুম্বাইয়ে অবস্থানরত শিমলাকে ভিডিও কল করে একাধিকবার কথা বলেন পলাশ। এসময় নিজেকে লন্ডনে আছেন প্রমাণ করতে পলাশ ঢাকায় অভিজাত হোটেলে ওঠেন এবং ভিডিও কল করেন বলে পরে শিমলা জানতে পারেন বলে জানিয়েছেন পুলিশকে।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে শিমলা মুম্বাইয়ে ছিলেন। এসময় আকস্মিকভাবে পলাশও মুম্বাইয়ে পৌঁছান। মুম্বাই যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে পলাশ জানান, লন্ডনে যাওয়ার পথে ট্রানজিট হিসেবে তিনি মুম্বাইয়ে অবস্থান করছেন। কিন্তু তিন-চারদিন ধরে মুম্বাইয়ে অবস্থান করায় শিমলার সন্দেহ হয়। তিনি পাসপোর্ট দেখতে চাইলে পলাশ সেটা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। মূলত সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়ে দ্বন্দের সূত্রপাত হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া জানান, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পলাশের বিষয়ে জানতে শিমলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু মুম্বাইয়ে অবস্থান করায় তিনি তখন সময় দিতে পারেননি। দেশে ফিরে নিজ থেকেই শিমলা ফোন করার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। তদন্তের প্রয়োজনে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার পথে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজে যাত্রীদের জিম্মি করে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন পলাশ আহমেদ। ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ। এরপর পলাশসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা।