উন্মুক্ত ‘ক্যাসিনো’ বগারবিল: জুয়ার ভোগে দিনের আয়

নগরের শান্তিনগর এলাকা। সারাদিনের কাজ শেষে নিজ বাসায় ফিরছিলেন দুই নির্মাণশ্রমিক। পোড়াকলোনির সামনে পৌছুঁতেই তাদের কৌশলে ডেকে নেন সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা তিন যুবক। ক্লান্ত দুই শ্রমিককে তারা দেখান তাসের ভেলকি। হাতসাফাইয়ে বোকা বনতেও সময় লাগল না। পরিণতি? প্রতারক তিন যুবকের হাতে সারাদিনের কষ্টার্জিত আয়ের টাকা তুলে দিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে দুজনকেই।

ঘটনাস্থল নগরের পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের শান্তিনগর এলাকা। তবে সবাই এই এলাকাকে চেনে বগারবিল নামে। ইয়াবা ব্যবসা, মাদক সেবন, চুরি থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের অপরাধের জন্য নগরজুড়ে বিশেষ পরিচিতি রয়েছে এলাকাটির।

- Advertisement -

বগারবিল এলাকার বড় সমস্যাগুলোর একটি জুয়া খেলা। প্রকাশ্যেই বসে জুয়ার আসর। নিম্নবিত্ত শ্রেণির শ্রমজীবীদের অনেকেই সারাদিনের কষ্টার্জিত টাকা নিয়ে বসে যান জুয়ার আড্ডায়। স্থানীয় কিছু যুবকের সুচতুর প্রতারণায় অনেক ক্ষেত্রেই তাদের শূন্য হাতে ফিরতে হয় ঘরে।

- Advertisement -google news follower

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী পরিচয় দেওয়া স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এলাকায় নানা অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে জুয়ার আড্ডাও পরিচালিত হয়ে আসছে।

জুয়ার ফাঁদ
সম্প্রতি বগারবিল এলাকায় নিত্যনতুন কৌশলে প্রতারণার দেখা মিলছে। এমনই এক কৌশল চলতি পথে তাসের জুয়া। প্রায় নিয়মিতই কেউ না কেউ এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

- Advertisement -islamibank

এ ধরনের প্রতারণার ক্ষেত্রে একটি গ্রুপে তিন থেকে পাঁচজন সদস্য থাকেন। টার্গেট করা হয় এলাকায় নতুন আসা পথচারীদের।

রাস্তার মুখে এই গ্রুপের নেতৃস্থানীয় একজন অপেক্ষা করেন। তিনিই মূলত ভিকটিম নির্ধারণ করেন। টার্গেট চূড়ান্ত হওয়ার পর ইশারা দেওয়া হয় গ্রুপের অন্য সদস্যদের।

এরপর রাস্তার একপাশে গামছা পেতে বসেন একজন। তিনটি কার্ড উল্টে পাশাপাশি রাখা হয়। তাকে ঘিরে থাকা অন্যরা কার্ডগুলো কোনটি কী বলার চেষ্টা করেন।

টার্গেট কাছে আসলেই তাকে কৌশলে কার্ড ডিলারের কাছে নিয়ে আসেন গ্রুপের কোনো একজন সদস্য। তারপর টার্গেটের সামনে কার্ড অনুমান করার চেষ্টা করেন।

এক্ষেত্রে জানা সত্ত্বেও ইচ্ছে করেই ভুল কার্ডের নাম বলা হয়। ডিলারের কাছে জমা পড়ে ১০০ টাকা। এখানেই ফাঁদে পা দেন টার্গেট।

১০০ টাকা বাজিতে উল্টানো কার্ডের মধ্যে নির্দিষ্ট কার্ডটির কথা ঠিক ঠিক বলে দেন। সাহস বাড়ে ভিকটিমের। বাজিও বাড়ান। এবারও তাকে সহজেই জিততে দেওয়া হয়।

কিন্তু ৫০০ বা এক হাজার টাকায় বাজি উঠলেই শুরু হয় আসল হাতসাফাই। এরপর থেকে ভিকটিমকে কোনোভাবেই জিততে দেওয়া হয় না।

একপর্যায়ে সারাদিনের কষ্টার্জিত টাকা খুইয়ে খালি হাতেই বাসায় ফিরতে হয় ভিকটিমকে। তবে শুধু শ্রমজীবী মানুষই নয়, এলাকায় অপরিচিত অনেক পথচারী শিকার হয়েছে এ ধরনের প্রতারণার।

আইপিএল বেটিং
ভারতের জনপ্রিয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা আইপিএল শুরু হলেই বগারবিল এলাকার চায়ের দোকানগুলোতে বসে জুয়ার আসর। প্রতিযোগিতার দলগুলোর জয়-পরাজয় নিয়ে বাজি ধরেন মৌসুমি জুয়াড়িরা।

তবে শুধু জয়-পরাজয় নয়, ওভারে রান, চার-ছয়, উইকেট নিয়ে পর্যন্ত বাজি ধরা হয়।

এই বাজিতে জড়িয়ে অনেকে নিজের ব্যবসার পুঁজি খুইয়েছেন। অনেকে ঋণে হয়েছেন জর্জরিত। বাজির টাকা আদায় বা বাজির অংক নিয়ে মতবিরোধে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।

ফুটবল নিয়েও জুয়া
শুধু আইপিএল নয়, ফুটবল খেলা নিয়েও বাজি ধরা হয় বগারবিলে। বিশেষ করে বিশ্বকাপ ফুটবল ও কোপা আমেরিকার সময় বাজি ধরা হয় বেশি।

এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্যারাম, লুডু খেলা নিয়েও বাজি ধরা হয়। তাসের জুয়াও চলে ছোট-বড় পরিসরে।

জুয়ার টাকা জোগাতে অপরাধ
জুয়া খেলতে গিয়ে নিজের সঞ্চিত অর্থ খোয়ানো কিংবা সারাদিনের আয় প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। একইসঙ্গে জুয়ায় হেরে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন অনেকে।

সেই ঋণের টাকা শোধ করতে অনেকে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এলাকার কিছু কিশোর জুয়ার টাকার জন্য চুরি-ছিনতাই করতেও দ্বিধা করে না।

নীরব প্রশাসন
বগারবিলে দীর্ঘদিন ধরে একরকম প্রকাশ্যেই জুয়া খেলা চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসা চলে আসছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে।

নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বগারবিলে জুয়া আসর নিয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। যদি অভিযোগ পাই, আমরা ব্যবস্থা নেব।’

আইপিএল বেটিং নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘দেখেন, একটা চায়ের দোকানে তিন-চারজন বসে গোপনে যদি বাজি ধরে সে খবর আমরা পাব কীভাবে? প্রতিটি দোকানে গিয়ে তো অভিযান চালানো সম্ভব না।’

রাস্তায় জুয়ার ফাঁদ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে এখনও আসেনি। আসলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM