স্বপ্ন দেখেছিলেন সুন্দর এক নগরের। সড়কের চারপাশে থাকবে সবুজ, সরানো হবে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর স্বপ্নপূরণের কাজেও লেগে পড়েন আ জ ম নাছির উদ্দীন।
দিন গড়িয়ে কেটে গেছে চার বছর। নগরের প্রধান সড়কগুলোতে হয়েছে সবুজায়ন। চলেছে সৌন্দর্যবর্ধন ও আলোকায়নের কাজ। ফলাফল তাই আজ চোখের সামনেই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় সেজেছে নগর। আগে যেসব এলাকার ফুটপাত দিয়ে দুর্গন্ধে হাঁটাচলা করা যেত না, সেখানে এসেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। ইতোমধ্যে এয়ারপোর্ট রোড, টাইগারপাস রোড, লালখান বাজার, কাজীর দেউরি, আউটার স্টেডিয়াম, আন্দরকিল্লা, জামালখান, চট্টেশ্বরী ও প্রবর্তক মোড় এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।
এছাড়া টাইগারপাস মোড়, কাজীর দেউরি মোড়, আন্দরকিল্লা মোড়, নিউমার্কেট মোড়, রেডিসন ব্লু মোড়, বারিক বিল্ডিং মোড়, জিইসি মোড়ের মতো গোলচত্বরগুলোকে সাজানো হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে। যাত্রীদের অপেক্ষার সুবিধার্থে আধুনিক যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে।
নিউমার্কেট থেকে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সড়ক, জিপিও এবং শাহ আমানত শপিং কমপ্লেক্স পর্যন্ত এলাকার প্রায় ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার রাস্তার মিড আইল্যান্ড ও ফুটপাতের সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের পূর্ব এবং উত্তর পাশের ফুটপাতসহ আউটার স্টেডিয়ামে বাগান নির্মাণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমাদের চট্টগ্রাম সাগর, পাহাড় ও সমতলের সম্মিলনে একটি প্রকৃতি প্রদত্ত নান্দনিক শহর। এই শহরকে সুন্দর করার জন্য আমরা ‘গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি’ ভিশন নিয়ে কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমরা পুরো নগরকে এলইডি লাইটিং-এর আওতায় নিয়ে আসছি। এছাড়া নগরের সব গোলচত্বর ও সড়ক বিভাজককে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হচ্ছে।
বিমানবন্দর সড়ক: সেতুর উপর আলোকসজ্জা, সবুজের সাজে ফুটপাত-ডিভাইডার
কর্ণফুলীর পাড়ঘেঁষে বিমানবন্দর সড়কের চেহারাই বদলে গেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সহযোগিতায় বৃহত্তর শিল্প গ্রুপ জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের অর্থায়নে নান্দনিক হয়ে উঠেছে বিমানবন্দর সংলগ্ন ভিআইপি সড়ক।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সড়কে উঠতেই চোখে পড়বে নানা ধরনের সারি সারি ফুলের গাছ। গাছে গাছে ফুটেছে হরেকরকম ফুল। সড়কের মাঝখানে লাগানো হয়েছে নানা রকমের ফুল-ফল আর ওষুধি গাছ।
সড়কে রয়েছে তিনটি সেতু। সেতুর ওপর আলোকসজ্জা মুগ্ধ করছে দেশি–বিদেশি পর্যটকদের। ফুটপাতের পাশে বাহারি ফুলের সমাহার। এখানে দেশ–বিদেশের অতিথিদের স্বাগত জানাবে দৃষ্টিনন্দন তিনটি ম্যুরাল। এগুলো হলো নৌকার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীনের ছবি।
কাজির দেউরি সড়ক: দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত, বাগান ও হাঁটার পথ
আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর উন্নয়নের পরশ পায় আউটার স্টেডিয়াম এলাকা। চসিক আউটার স্টেডিয়ামকে ঘিরে নেয় উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা। চসিকের তত্ত্বাবধানে বেসরকারি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তৈরি হয় সৌন্দর্যবর্ধনের নকশা।
কাজির দেউরি সড়কে আউটার স্টেডিয়ামের ভিতরে আগে ড্রেনের ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে ড্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পথচারীদের হাঁটা-চলা নির্বিঘ্ন করতে দখলমুক্ত করে তৈরি হয়েছে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত। নির্মিত হয়েছে বাগান ও হাঁটার পথ। ইতোমধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে পিকআপ, ভ্যান, মিনিট্রাকের অস্থায়ী স্ট্যান্ড। নিষিদ্ধ করা হয়েছে আবর্জনা ফেলা।
জামালখান সড়ক: বাগান-বসার স্থান, টাইলস করা ফুটপাত
জামালখানের এজি চার্জ স্কুল থেকে পিডিবি পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ফুট ফুটপাতজুড়ে রয়েছে বাগান ও বসার জায়গা। ফুটপাতে বসানো হয়েছে টাইলস। রয়েছে দুটি টয়লেটও।
পরিত্যক্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলোয় হয়েছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। আগে ছিল ৩২টি ডাস্টবিন। বর্তমানে জামালখানে একটিও ডাস্টবিন নেই। সব ডাস্টবিনগুলো ভেঙে করা হয়েছে ফুলের বাগান।
ফিরিঙ্গীবাজার সড়ক: নেই ডাস্টবিন, আছে সবুজের হাতছানি
ফিরিঙ্গীবাজার সড়কে একসময় অনেকগুলো স্থায়ী ডাস্টবিন ছিল। নাকে হাত চেপে চলাচল করতে হতো পথচারীদের। সেই ডাস্টবিনগুলো তুলে দিয়েছে চসিক। সেখানে এখন ফুলের বাগান। তৈরি হয়েছে ফুল গাছঘেরা বসার স্থান। একই সঙ্গে ব্যবস্থা করা হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জার।
শুধু তাই নয়, কোতোয়ালি মোড় থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার মাঝখানে করা হয়েছে বিভিন্ন ফুলের বাগান। রাতে এলইডি লাইটে আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। কোতোয়ালি মোড়ে হযরত শাহ সুন্দর (র.) ও হযরত শাহ জালালের (র.) মাজারকে ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে। একসময় অন্ধকার ছিল মেরিনার্স সড়ক। সেই সড়ক এখন ফুলের বাগান ও এলইডি লাইটে আলোকিত।
নগরবাসীর ভাবনা
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী বলেন, আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর পাল্টে গেছে আউটার স্টেডিয়াম এলাকা। ড্রেনের ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। পথচারীদের হাঁটা-চলা নির্বিঘ্ন করতে দখলমুক্ত করা হয়েছে ফুটপাত। একইসঙ্গে ফুটপাতে নির্মিত হয়েছে বাগান ও হাঁটার পথ। ইতোমধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে পিকআপ, ভ্যান, মিনিট্রাকের অস্থায়ী স্ট্যান্ড। নিষিদ্ধ করা হয়েছে আবর্জনা ফেলা। এজন্য আমি মেয়রকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই।
রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ জয়নিউজকে বলেন, বিমানবন্দর সড়ক বদলে দেওয়ার মূল নায়ক হচ্ছেন ক্লিন ও গ্রিন সিটির রূপকার সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তাঁর নিদের্শনায় অপরূপ সাজে সাজছে নগর। আশা করি সামনের দিনগুলোতেও সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।