পুলিশ বক্সের সামনেই পতিতার হাট!

ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম এসেছিলেন চকবাজারের বাসিন্দা শাহনাজ বেগম (ছদ্ধনাম)। ট্রেন থেকে নেমে বটতলী স্টেশনের পুলিশ বক্সের সামনে অটোরিকশার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্ত গাড়িতো পেলেনই না উল্টো পড়লেন এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে শিকার হন একাধিক ব্যক্তির বাজে মন্ত্যব্যের।

- Advertisement -

শুধু শাহনাজ বেগম নয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনতাহাও (ছদ্ধনাম) জয়নিউজকে একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ক্লাস করতে বটতলী থেকে প্রতিনিয়ত ট্রেনে করে ক্যাম্পাসে যাই। ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরতে ট্রেন থেকে নেমে যখন গাড়ির জন্য রাস্তায় দাঁড়াই। তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। প্রতিদিনই খুব বাজে মন্তব্যের শিকার হই।

- Advertisement -google news follower

অতিষ্ঠ পথচারীরা
ঠিক একই কথা বটতলী স্টেশন পুলিশ বক্সের সামনে থাকা কয়েকজন পথচারীরও। তাদের সঙ্গে কথা বললে জানায়, এখানে কোনো রাত-দিন লাগে না। পতিতারা অবাধে হাঁটাচলা করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে অবৈধ দেহব্যবসা।

বিভিন্ন খদ্দেররা যেমন তাদের ডাকে, তেমনি তারাও খদ্দেরদের ডাকে। যে কারণে পথচারী নারীদের প্রায়সময় বাজে মন্তব্যের শিকার হতে হয়। আর এসব চলে পুলিশ বক্সের সামনেই! পুলিশ তাদের কিছু বলে না। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের সঙ্গে ওদের হাত রয়েছে।

- Advertisement -islamibank

এই তো গেল বটতলীর চিত্র। কিন্তু শুধু বটতলীতে নয়, নগরের সিনেমা প্যালেস, জিইসি মোড় ও কাজির দেউরি পুলিশ বক্সের আশপাশেও দেখা যায় একই চিত্র।

রেলওয়ে কর্মকর্তার অভিযোগ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলওয়ে কর্মকর্তার অভিযোগ, পুলিশের সহযোগিতা আছে বলেই তারা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সুযোগ বুঝেই তারা সাধারণ পথচারীদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়। প্রায়সময় তাদের (পতিতা) ফোন পেয়ে পুলিশ এসে সহায়তা করে। কারা এসব অপরাধ করে সবই পুলিশ জানে। চোখের সামনে এসব দেখেও চুপ করে থাকতে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়
নগরের নিউমার্কেট এলকার বটতলী পুলিশ বক্সের সামনে সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ হাজির ৫-৬ জন নারী। যারা দিনেদুপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মূল সড়কের আশপাশে। সড়কে হাঁটাচলা করা যুবক, মধ্যবয়সী যেকোনো পুরুষকে তারা হোটেলে যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেখা যায় একই চিত্র।

তবে দিনের তুলনায় রাতে এদের সংখ্যা বেশি। নির্বিঘ্নে পুরো এলাকা চষে বেড়ান তারা। রাত যত বাড়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকে পতিতারা। দেহ ব্যবসার সঙ্গে চলে অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজি।

স্থানীয়দের অভিযোগ
স্থানীয় ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, কোনো পথচারী না জেনে সন্ধ্যার পর বাইশ মহল্লা কবরস্থানের সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করলে পতিতাদের হেনস্থার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে যুবকদের। তাদেরকে জামার কলার ধরে টাকা দাবি করা হয়। অনেকের হাতে থাকা ব্যাগও রেখে দেওয়া হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মারধর করা হয়। সেই সঙ্গে উচ্চস্বরে গালিগালাজতো আছেই। লোকলজ্জার ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হয় তারা।

ভুক্তভোগীর বক্তব্য
চাঁদাবাজির শিকার যুবক বাবলু জয়নিউজকে বলেন, আমি বিআরটিসি বাস কাউন্টার থেকে হেঁটে রিয়াজউদ্দিন বাজার যাচ্ছিলাম। বাইশ মহল্লা মসজিদ ক্রস করতেই দু’জন মেয়ে আমার শার্টের কলার ধরে বাসের পেছনে নিয়ে যায়। হঠাৎ তারা আমার মানিব্যাগ ও মোবাইল দিতে বলে। আমি দিতে ‍অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে মারধর করে।

একপর্যায়ে তারা আমাকে অবৈধ কাজের অভিযোগে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। এসময় তারা জোর করে আমার কাছে থাকা দুই হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।

অটোরিকশা চালক বলছে
এসব অপকর্মের বর্ণনা দিতে গিয়ে অটোরিকশা চালক রহমত উল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, সাধারণত এদেরকে (পতিতা) নিয়ে কোনো খদ্দের কোথাও গেলে ভাড়া ইচ্ছেমতো হাঁকানো যায়। ৫০০ বা হাজার টাকা এডভান্স দিয়ে অটোরিকশায় তুলতে হয়। কিন্তু কিছু দূর গেলে তারা (পতিতারা) লোকসমাগম দেখে অটোরিকশা থামাতে বলে। তখন তারা খদ্দের ফেলে নেমে পড়ে। আর খদ্দেরকে বলে- ঝামেলা করলে পুলিশ ডেকে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিব। মাঝে মাঝে তারা (পতিতা) পছন্দমতো জায়গায় নিয়ে খদ্দেরের টাকা-পয়সা ও মোবাইল রেখে দেয়।

ওসি যা বলছেন
এসব ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের সঙ্গে কথা হয় জয়নিউজের। তিনি বলেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কোনো মেয়েকে পতিতা বলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না । কারণ কোনো মেয়ের গায়ে পতিতা লিখা থাকে না। তবে হয়রানির শিকার কেউ অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিব।

ট্রাফিকের বক্তব্য
এ বিষয়ে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আমির জাফর জয়নিউজকে বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে অবগত ছিলাম না। পথচারীদের জন্য বিষয়টি আসলেই বিব্রতকর। ট্রাফিক পুলিশরা গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই হয়ত নজরে আসে না। তবে নিজ নিজ থানায় বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নিলে বেশি ভালো হয়। আমি বিষয়টি সবাইকে জানাচ্ছি। আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিএমপি যা বলছে
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম জয়নিউজকে বলেন, কোনো মহিলা বা মেয়ে যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে পুলিশের কিছু করার থাকে না। তবে পুলিশ বক্সের সামনে এমন কিছু হওয়ার কথা না। আমি বিষয়টি দেখব।

পুলিশের যোগসূত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এসব কাজে যোগসূত্র থাকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জয়নিউজ/এসআই
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM