কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (সরকারি হাসপাতাল) দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের খাবার লুটপাটের মহোৎসব চলছে। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগকে বারবার অবহিত করার পরেও তা বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি তারা। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতনমহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত টিএইচও’র ইন্ধনে বাবুর্চি নেজাম দীর্ঘদিন ধরে রোগীর খাবার বাইরে বিক্রি ও হাসপাতালের কেন্টিনকে খাবার হোটেল বানিয়েছেন। যা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি কক্সবাজারের সিভিল সার্জন এ হাসপাতালের অনিয়ম বন্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
জানা গেছে, বাবুর্চি নেজাম প্রতিবেলা খাবার ৪০-৫০ টাকায় বাইরের লোকজনের কাছ বিক্রি করেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার জয়নিউজের পক্ষ থেকে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. মুজিবুর রহমানকে জানালেও তিনি কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
এছাড়াও হাসপাতালের খাবার সরবরাহে সরকারিভাবে নিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও রোগীদের খাবার সামগ্রী সরবরাহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পেকুয়া হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের নিচতলার দক্ষিণ পার্শ্বে দুইটি কক্ষ রয়েছে। সেখানের একটি কক্ষে রোগীদের জন্য খাবার রান্না করা হয়। অপর কক্ষে ডাইনিং টেবিল ও বেশ কয়েকটি চেয়ার। দুপুর ২টার পরেই দেখা মিলল হাসপাতাল থেকে খাবার কিনে খাওয়া পেকুয়া উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী, ডাক্তার ও বাইরের অচেনা লোকদের চেহারা!
এসময় দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কার্যালয়ের ১০/১৫ জন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরো ১০/১২ জনের মতো লোক ডাইনিংটেবিলে বসে হাসপাতালের রোগীদের খাবার খাচ্ছেন!
পেকুয়া হাসপাতালের কেন্টিনে খাবার খেতে আসা অনেকেই জয়নিউজকে জানান, হাসপাতালের বাবুর্চি নেজামের রান্নার মান খুব ভালো। দামেও সস্তা তাই দুপুর বেলার খাবারটা বাসায় যাওয়ার পরিবর্তে এখান থেকেই কিনে খাওয়া হয়।
প্রতিবেলা খাবার খেতে বাবুর্চি নেজাম উদ্দিনকে কত টাকা দিতে হয়- প্রশ্ন করা হলে ওই কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতি বেলা খাবার খেতে ৪০-৫০ টাকা করে দিতে হয়।
বাবুর্চি নেজাম উদ্দিনের কাছে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে জয়নিউজকে বলেন, ‘আমার হাসপাতালে আমি খাবার বিক্রি করলে আপনাদের জানাতে হবে কেন?- উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে আর কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের আরএমও ডা. মুজিবুর রহমান জয়নিউজকে বলেন, বাবুর্চি নেজাম হাসপাতালের রোগীদের খাবার বিক্রি করছে না। বাইরে থেকে আলাদা চালসহ রান্নার সামগ্রী এনে হাসপাতালের কেন্টিনে রান্না করে দুপুর বেলার খাবার সরকারি কর্মচারীদের কাছে বিক্রি করে। এতে নেজাম কিছু টাকা আয় করে। তবে এখানে দোষের কিছু দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পেকুয়া উপজেলার সচেতন নাগরিক ফোরামের সদস্য সচিব মাহমুদুল করিম জয়নিউজকে বলেন, জরুরিভিত্তিতে পেকুয়া সরকারি হাসপাতালে রোগীর খাবার বাইরের লোকদের বিক্রি বন্ধসহ সকল প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ না করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।