নগরের জামালখানে অবস্থিত সেনসিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
১৫ বছর বয়সী এক ছাত্রের রক্তের হেমাটোলজি রিপোর্টে প্লেটলেট (অনুচক্রিকা) এর পরিমাণ অস্বাভাবিক কম পেয়েছে তারা। এতে ওই ছাত্রের ডেঙ্গু হয়েছে ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা।
পরে অবশ্য নগরের অন্য দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার রক্তের হেমাটোলজি পরীক্ষা করে স্বাভাবিক ফলাফল পাওয়া যায়।
জানা যায়, নগরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তীর্থঙ্কর চৌধুরীর শরীরে জ্বর ওঠে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে।
পরিবারের সদস্যরা মনে করে তার ডেঙ্গু হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর তীর্থঙ্করের রক্তের হেমাটোলজি পরীক্ষা করানো হয় নগরের জামালখানের সেনসিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর রিপোর্টে দেখা যায় তার ডেঙ্গু হয়নি। তখন তার রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ত্রিশ হাজার।
তবে জ্বর না কমায় আবারো সেনসিভে তীর্থঙ্করের রক্ত পরীক্ষা করানো হয় বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে। রাতেই রিপোর্ট দেওয়া হয়।
তবে এবারও পাওয়া যায়নি ডেঙ্গু। তবে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজারে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তীর্থের বাবা বিপ্লব চৌধুরী।
কারণ রক্তে স্বাভাবিক প্লেটলেটের পরিমাণ দেড় লাখ থেকে চার লাখ। পরদিন বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালে তিনি নগরীর আরো দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছেলের রক্ত পরীক্ষা করান। দুটি রিপোর্টেই তীর্থের প্লেটলেটের পরিমাণ আসে ১ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তীর্থের প্লেটলেটের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১০ হাজারে। যেটি অস্বাভাবিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রভাষক ডা. প্রদীপ কুমার নাথ জয়নিউজকে বলেন, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্লেটলেটের পরিমাণ এত বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। বাড়লেও ২০-৩০ হাজার বাড়তে পারে। তবে ১ লাখ ১০ হাজার কখনোই বাড়বে না। মনে হচ্ছে সেনসিভে প্লেটলেট পরীক্ষা করানো হয়েছে সেল কাউন্টার মেশিনে।
মেশিনে অনেক সময় ভুল তথ্য দেয়। তাই প্লেটলেট পরীক্ষা করতে হয় স্লাইডে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে। এমফিল করা একজন ডাক্তার এ পরীক্ষা করতে পারেন।
সেনসিভ কর্তৃপক্ষ কীভাবে পরীক্ষা করেছে সেটি আসলে আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, একজন মানুষের যদি প্লেটলেট ৮০ হাজারে নেমে আসে তাহলে তার রক্তচাপ ফল্ট করবে। বমি শুরু হবে। কিন্তু রোগীর অভিভাবকদের মাধ্যমে জেনেছি তার তেমন কোনো সমস্যাই হয়নি। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে সেনসিভের রিপোর্টটি ভুল ছিল।
এ বিষয়ে জানতে সেনসিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল ইসলাম মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় আছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে তিনি যে ডাক্তার রিপোর্ট দিয়েছেন তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
সেনসিভের রিপোর্ট দেওয়া সে ডাক্তারের নাম মো. জোবায়ের।
তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটি কোনো বিষয় নয়। প্লেটলেট বাড়তে পারে। তবে বাড়লে আর কমে না। তবে ২৭ সেপ্টেম্বর প্লেটলেট দুই লাখ ত্রিশ হাজার ছিল, ২ অক্টেবর কিভাবে ৮০ হাজারে নেমে আসল সে বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে তীর্থের বাবা বিপ্লব চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে সেনসিভ কর্তৃপক্ষ আমাকে হয়রানি করল। প্লেটলেট কমে গিয়েছে ভেবে আমি আমার ছেলেকে সঙ্গে সঙ্গে পাঁচলাইশের হেলথ হোম ক্লিনিকে ভর্তি করাই। পরে আরো দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করাই। সেখানে তার প্লেটলেট স্বাভাবিক আসে।
তিনি বলেন, ক্লিনিকে ভর্তি করানোতে আমার দুই দিনে ১৫ হাজার টাকা বিল দিতে হয়েছে। এছাড়া মানসিক যন্ত্রণা তো ছিলই।এভাবে ভুল রিপোর্ট দিয়ে মানুষকে হয়রানি করা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।