রোগীদের মাথার ওপরে নিয়ম করেই ঘুরছে ফ্যান। কিন্তু ফ্যান থাকা সত্বেও রোগী বা তাদের আত্মীয়দের কারো হাতে হাতপাখা আবার কারো বেডের পাশে নিজ উদ্যোগে আনা ছোট টেবিল ফ্যান।
রোগীকে গরমের যন্ত্রণা থেকে বাঁচাতে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন তার স্বজন। অথচ নিজেই গরমে ঘামতেছেন। এদিকে কিছু রোগী গরম থেকে বাঁচতে নিজেই হাতপাখা ঘোরাচ্ছেন। আবার কিছু ওয়ার্ডে ফ্যানের পাশাপাশি রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও। তাও সবগুলোই বিকল। এগুলো মেরামত করার কোনো তাড়াও নেই কর্তৃপক্ষের।
উপরের চিত্রটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটির বেশির ভাগ ওয়ার্ড পুরনো সিলিং ফ্যান ও বিকল শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র দিয়ে চলছে। রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা তীব্র গরমে কষ্ট পেলেও কর্তৃপক্ষের নেই কোনা মাথাব্যাথা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের বাৎসরিক বাজেটে এ বিষয়ে তেমন বরাদ্দ পাওয়া যায় না। তবে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, পুরনো ফ্যান ও নষ্ট শীতাতপ যন্ত্র লাগিয়ে রেখে তাদের সঙ্গে রীতিমতো তামাশা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই একই অবস্থা। ফ্যানগুলো ঘুরছে কিন্তু গতি কম। অনেক দিন ধরে চলার কারণে অধিকাংশ ফ্যানেরই ক্যাপাসিটর নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ফ্যানগুলো থেকে কোনো বাতাসই পাচ্ছেন না রোগী ও তাদের স্বজনরা। এ কারণে অসহ্য গরমের ভেতর দিন কাটাচ্ছেন হাসপাতালের রোগীরা।
কিছুদিন আগে চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ১২নং ওয়ার্ডে ভর্তি হন। কিন্তু ওয়ার্ডের প্রায় সবগুলো ফ্যান নামকাওয়াস্তে ঘুরছে সারাদিন। তাই বাধ্য হয়ে তিনি বাসা থেকে একটি ব্যাটারিচালিত ছোট টেবিল ফ্যান নিয়ে এসেছেন। রাতে ঘুমানোর আগে তার ছেলে এটি তার বেডের পাশে রেখে যান। আবার সকালে এসে চার্জ করতে বাসায় নিয়ে যান।
নুরুল আমিন জয়নিউজকে বলেন, ওয়ার্ডের ফ্যানগুলো ভালোভাবে কাজ না করায় ভর্তি হওয়ার পরদিন বাসা থেকে ব্যাটারিচালিত ফ্যান নিয়ে আসি। কারণ এত গরমে রাতে ঘুমানো সম্ভব নয়। সারাদিনও তীব্র গরমে দিন কাটে। কারণ ওয়ার্ডে রোগীর পাশাপাশি তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও এখানে আসেন। ফ্যানগুলোতে বাতাস না থাকায় পুরো ওয়ার্ড গরম হয়ে ওঠে।
অথচ ১২নং ওয়ার্ডে হৃদরোগীরা ভর্তি হন। হৃদরোগীদের গরম পরিবেশে না রাখার পরামর্শ চিকিৎসকরাই দিয়ে থাকেন। একই কথা বার্ন ইউনিটের বেলায়ও। পোড়া রোগীদের রাখা প্রয়োজন শীতল স্থানে। কিন্তু চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের রোগীরা দিন কাটায় অসহ্য গরমে ছটফটিয়ে। কারো কারো স্থান হয় আবার মেঝেতে।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মোজাহের হোসেন জয়নিউজকে বলেন, দুর্ঘটনায় আমার পিঠের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। ডাক্তার নিজেই বলেছেন ক্ষত স্থানে বাতাস লাগাতে। কিন্তু হাসপাতালের ফ্যানগুলোতো ঘুরেই না। বাতাস লাগাব কেমনে? তাই আমার স্ত্রী আর মেয়ে পালা করে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে। এজন্য তারা রাতে ঘুমাতেও পারছে না।
এদিকে হাসপাতালের কিছু কিছু ওয়ার্ডে আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানো আছে। এগুলো আবার লাগানোর কয়েকদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। তবে দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষ এগুলো মেরামত বা নতুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে জানা যায়। তাই এসব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র রোগী ও তাদের স্বজনদের উপহাসের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি এক রোগীর স্বজন উপহাসের সুরে বলেন, যে হাসপাতালে ফ্যানই ঠিকমতো ঘুরে না সে হাসপাতালে আবার এসি! এসিগুলো যদি নষ্টই পড়ে থাকবে তাহলে এগুলো লাগিয়ে রাখা কেন? আর না চললে এগুলো লাগানোরই বা কি দরকার ছিল? সে টাকা দিয়েতো নতুন ফ্যান কেনা যেত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদ জয়নিউজকে বলেন, হাসপাতালের মোট ব্যয়ের জন্য প্রতিবছর একটি বাজেট করা হয়। ফ্যান বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের জন্য তেমন একটা বাজেট পাওয়া যায়নি। তবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ওয়ার্ডের জন্য নতুন ফ্যানের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সেগুলো চলে আসবে। তখন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, কিছু বিশেষায়িত ওয়ার্ডে যন্ত্রগুলো লাগানো হয়েছিল। কিন্তু এগুলোরতো একটা ধারণক্ষমতা আছে। রুমে যদি ২০ জন মানুষের বদলে ৮০ জন মানুষ থাকে তাহলে এসি কিভাবে কাজ করবে? রোগীর সঙ্গে ওয়ার্ডে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা বসে থাকেন। তাদের কিছু বলাও যায় না। নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের কিছু বললে রোগীর স্বজনেরা তাদের দিকে তেড়ে আসেন। সমস্যা সমাধানের জন্য সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।