পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের ভগবান বুদ্ধের বাণী দিয়ে মানুষের চিত্তকে শুদ্ধ করেছেন। তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে চীনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, সব সম্প্রদায়ের প্রতি মমতাবোধ দেখিয়ে মানুষকে রক্ষা করেছেন।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারের রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার প্রাঙ্গণে প্রয়াত বৌদ্ধ ধর্মীয়গুরু পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরর পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রয়াত বৌদ্ধ ধর্মীয়গুরু পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
একুশে পদকে ভূষিত বাংলাদেশী বৌদ্ধদের তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ও বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার প্রাক্তন সভাপতি, উপসংঘরাজ প্রয়াত পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরর পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের।
একইদিন বিকালে প্রয়াত ধর্মীয় গুরু পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরকে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পেটিকাবদ্ধ করা হয়েছে।
বীর বাহাদুর এমপি বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্য, জীবের জন্য, ধর্মের জন্য কি করেননি তিনি? আজ তাঁর কর্মই তাঁকে এই আসনে উপণীত করেছে। মৃত্যুর পরে মানুষের এত ভালোবাসা-শ্রদ্ধা কতজনে পায়। প্রয়াত এ ধর্মীয় গুরুকে একবার দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ এখানে ছুটে এসেছেন শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শ্রদ্ধেয় গুরু ভান্তে পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের একজন ধর্মীয় গুরুই ছিলেন না, তাঁর মৃত্যুতে বৌদ্ধ সমাজ একজন বড় অভিভাবককে হারাল। এই শূণ্যতা কোনোদিনও পূরণ হবার নয়।
ধর্মসভায় উপ-সংঘরাজ ধর্মপ্রিয় মহাথের প্রধান ধর্মদেশক ও উপ-সংঘরাজ শীলানন্দ মহাথের, অধ্যাপক ধর্মরক্ষিত মহাথের, এস ধর্মপাল মহাথের, ড. জিনবোধি মহাথের, বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব এস লোকজিৎ মহাথের, প্রিয়রত্ন মহাথের ও ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়সহ প্রাজ্ঞ ভিক্ষুসংঘ ধর্মদেশক হিসাবে বক্তব্য রাখেন।
স্মৃতিচারণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. শরিফ আহমেদ, সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক এমপি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. মুজিবুর রহমান, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষন বড়ুয়া, রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) চাইথোয়াইহ্লা চৌধুরী, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের ও রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম।
এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে রামু সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হক, রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়ুয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরুণ বড়ুয়া, অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া ও পলক বড়ুয়া আপ্পু বক্তব্য রাখেন।
ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে বুধবার (৯ অক্টোবর) বিহার প্রাঙ্গণে মহাসংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, ধর্মসভা, অতিথি ভোজন, স্মৃতিচারণ সভা এবং সত্যপ্রিয় মহাথেরোর প্রায় দুই শতাধিক ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ দিনব্যাপী নানা আনুষ্ঠানের আয়োজন করে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার পরিচালনা কমিটি।
উল্লেখ, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ, পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের (৯১) ৩ অক্টোবর রাত পৌনে একটার দিকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরলোকগমন করেন।
জানা গেছে, ১৯৩০ সালের ১০ জুন কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মেরংলোয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সত্যপ্রিয় মহাথের। ১৯৫০ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে বিধু ভূষন বড়ুয়া বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে উপসম্পদা গ্রহণ করে সত্যপ্রিয় নাম ধারণ করেন। এরপর তাঁর গুরু ভান্তে আর্য্যবংশ মহাথেরর সঙ্গে তিনি উখিয়া উপজেলার ভালুকিয়া বৈজয়ন্তি বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করেন।
পরে ওই বিহারের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন পন্ডিত সত্যপ্রিয়। সেখান থেকে কয়েক বছর পর পড়াশোনার জন্য মির্জাপুর পালি কলেজে চলে যান। ১৯৫৪ সালে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য মিয়ানমারে চলে যান। প্রায় ১০ বছর পর ১৯৬৪ সালে মিয়ানমার থেকে ফিরে রামু সীমা বিহারে অবস্থান গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৭০ বছরের ভিক্ষু জীবনে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। ২০১৫ সালে সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রয়াত এই বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু একুশে পদক লাভ করেন।