সেই ষাটের জমানা থেকে হাল আমলের বাংলাদেশে, যেই দশকের কথাই বলুন না কেন, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসকদের অনেকেরই আছে কিছু অভিন্ন দোষ। কেউ চেয়ারে বসে লুটপাট করেন, কারো মদ কিংবা নারীর কেলেঙ্কারি, কারো আছে নিছক বিত্তবৈভবে ফুলে-ফেঁপে ওঠার লোভাতুর দৃষ্টি।
চট্টগ্রামের রাজনীতিতেও তেমন অনেকের নাম বলা যায় ইতিহাসের অন্বেষণে। কিংবা সমঝোতা বা আপসকামিতার কথা’ই বলি না কেন, নতশিরে যেকোনো উন্নয়নে নিজের স্বার্থসিদ্ধির নজির আছে কারো কারো ক্ষেত্রে। কিন্তু চলতি রাজনৈতিক প্রবাহে প্রভাবশালী ও দায়িত্বশীলদের মধ্যে চট্টলমেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আছেন এসব দোষ মুক্ত। তাঁর অনুসারীরা বুকে হাত দিয়ে উচ্চকন্ঠে এই দাবিটি করতেই পারেন। এটি তাঁর অনুসারী কিংবা ভক্ত অনুরক্তদের মনের জোর এনে দেয়। আর প্রশাসক হিসেবে যদি বলি, মেয়র পদে তিনিই একমাত্র মেয়র যিনি নিজের সম্মানিটুকু তো গ্রহণ করেনিই বরং তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি অর্থ প্রতিমাসেই দিয়ে চলেছেন অনাথ দুস্থ শিক্ষার্থী ও অসহায়দের।
দীর্ঘদিনের বঞ্চিত রাজনৈতিক কর্মী সাবেক ছাত্রনেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনের প্রাপ্তির দরজাটি যেন খুলে যায় প্রায় ছয় বছর আগে।
আরও পড়ুন:নগরপিতার জন্মদিন আজ
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাই তাঁর নাম যুক্ত করে দেন কমিটিতে। এর দেড় বছর না যেতেই মনোনয়ন পান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে। তাঁর এই প্রাপ্তিকে রাজনৈতিক নির্বোধেরা ‘হঠাৎ প্রাপ্তি’ মনে করলেও আসলে এর পেছনে রয়েছে তাঁর দীর্ঘ ত্যাগ ও ধৈর্যের সাধনা। বঞ্চনা বদনাম ও মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েও দল ছেড়ে যাননি তিনি। সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনিক রাজনৈতিক অপশক্তি থেকে লোলুপ লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। শেষ পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে ছিলেন এবং আছেন।
আর আমরা যতটুক তাঁকে চিনি, তিনি শেষ পর্যন্ত প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির অভিভাবক শেখ হাসিনার সঙ্গেই থাকবেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, দলে এবং সরকারে উপর্যুপরি এমন প্রাপ্তি যার ভাগ্যে জুটেছে, তিনি কতটুকু সফল? এমন প্রশ্নেও যেকোনো বিতর্ক ছাড়িয়ে এ কথা বলা যায়, নাগরিকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।
আরও পড়ুন:‘মানবিক’ মেয়র নাছির
সচেতন যেকোনো নাগরিক এ কথা একথা নিশ্চিত স্বীকার করবেন যে বছরের পর বছর থাকা বিলবোর্ড ঝুঁকি থেকে শহরকে মুক্ত করেছেন তিনি। নগর সৌন্দর্যহানির অপরিণামদর্শী দৈত্য ‘বিলবোর্ড’কে নির্মূল করেছেন এই মেয়র। এ কাজটি ঠুনকো কোনো বিষয় নয়। নিজের দলের যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও শুভার্থী অনেকের সরাসরি যেন আয়ের পথে আঘাত হেনে নগরবাসীকে নিরাপত্তা ও স্বস্তির স্বাদ দিয়েছেন মেয়র নাছির।
প্রসঙ্গক্রমে মনে করিয়ে দিতেই হয়, তাঁর পূর্ববর্তী মেয়রের সময়কালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ, যুবদল ও ছাত্রদল নেতা বিলবোর্ড ব্যবসায়ীরা মেয়র মনজুর আলমকে কার্যত জিম্মি করে টেবিল চাপড়ে ছিলেন।
মেয়র নাছিরের সময়কালে সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারেননি। এটিও সাধারণ নগরবাসীর দৃষ্টিকোণ থেকে স্বস্তির পরিচায়ক। প্রায় ৫ বছরের মেয়র হিসেবে তাঁর সময়কালে গোড়ার দিকে ‘বরাদ্দ বৈষম্য’ থাকলেও শেষের দিকে তাঁর যেন কপালটাই খুলে যায়। একদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননসহ অন্যান্য কাজের মেগা প্রকল্প চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বদলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয় ও একইসঙ্গে নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্পের বিপুল বরাদ্দ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দেওয়া হয়। যা স্মরণকালে নজিরবিহীন।এর সুফল আরো কয়েক বছর পরেও অন্তত নগরবাসী ভোগ করবেন আশা করা যায়।
আরও পড়ুন: দায়িত্ব পালনে মেয়র, বেতন পান অসহায়রা
মেয়র হিসেবে জামালখান ওয়ার্ডকে আইডল ওয়ার্ড হিসেবে যে নান্দনিক সৌন্দর্যের পরিবর্তন আনতে তিনি সফল হয়েছেন, নিঃসন্দেহে আগামীতে সুযোগ পেলেই পুরো শহর জুড়ে তেমন সৌন্দর্যের বিকাশ তিনি ঘটাতে পারবেন বলে বিশ্বাস রয়েছে নগরবাসীর।
একইসঙ্গে শহরজুড়ে আলোকায়ন এবং ক্রমবর্ধমান সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও সড়ক সংস্কার কাজসহ পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে অন্যরকম সফলতার ল্যান্ডমার্ক শহর যেন এখন চট্টগ্রাম। শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে পূর্ববর্তী মেয়রদের গৃহীত কার্যক্রমকে বহাল রেখেই আইটি ভিলেজ স্থাপনসহ নতুন নতুন প্রকল্প কাজ গ্রহণ করে যেন নতুন আশার সঞ্চার ঘটিয়েছেন তিনি। মেয়র হিসেবে শুধু নয়, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নানা বাধার মুখেও শহরে প্রথম সুইমিং পুল স্থাপন করে নজির সৃষ্টি করেন তিনি। বদলে দিয়েছেন যেন চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামসহ পুরো এলাকাটিকেই। বিশেষ করে তারুণ্যের শক্তিকে জাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: মেয়র নাছিরের ৪ বছর: বদলে গেছে চট্টগ্রাম
একদিকে সনাতনী সম্প্রদায়ের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সুসম্পর্ক, অন্যদিকে এই বন্দর শহরে শ্রমিক-কর্মচারীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর যে সংযোগ, তা থেকে একথা স্পষ্টই বলা যায় যে, চলতি সময়ে অত্যাসন্ন মেয়র নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গণমুখী যোগ্যমুখ আ জ ম নাছির উদ্দীন। শুধু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কিংবা চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), সমাজসেবা,আবাসনসহ সেবা ও গণমুখীতার প্রত্যেকটি খাতেই একজন সফল উদ্যোক্তা-সংগঠকের নাম আ জ ম নাছির উদ্দীন।
আজকের দিনেই বনেদি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া এ মানুষটি সেই কৈশোর থেকে যে সাংগঠনিক যাত্রা, তার প্রতিটি ধাপেই তিনি সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করতে পেরেছেন।
আশা করা যায়, ভবিষ্যতও পারবেন। হে গণমুখী চট্টলমেয়র, জন্মদিনে অতলান্ত শুভেচ্ছা।
লেখক: (সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক)