ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হলেও দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই আসছে প্রচুর পেঁয়াজ।
ফলে অনেকটা নাগালে এসেছে পেঁয়াজের দাম। এছাড়া জেলা প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির কারণেও পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, এখনও পেঁয়াজের দাম বেশি। দাম আরও কমা উচিত।
ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়েছিল। ১৬ দিন পর সোমবার (১৪ অক্টোবর) দাম কমে প্রায় অর্ধেকে ফিরে এসেছে। দেশে আমদানি পণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে সোমবার প্রতি কেজি মিয়ানমারের উন্নতমানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়। এছাড়া সেই দেশের নিম্নমানের পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভারতের বিকল্প দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ার ফলে পেঁয়াজের বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তবে আমদানি আরো বাড়লে দাম আরো কমবে বলে আশাবাদী তারা।
২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এর পরদিন থেকে দেশের বাজারে এই পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারেই দাম বেড়ে মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে তা ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে দাম কমার পর এখন মিয়ানমারের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দাম বাড়ার পর ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেন। মিয়ানমার থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন পেঁয়াজ আমদানি হতে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও তিনটি চালানে মিসর, মিয়ানমার ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। আমদানির পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে তদারকি শুরু করে। সব মিলিয়ে দাম অনেকটাই কমে আসে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর ১৬ দিনে প্রায় ১৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার ও মিসর থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানি হয়। এখন টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে মিসর, মিয়ানমার ও চীন থেকে আনা তিনটি চালান খালাসের পর নতুন করে আরও চালান আসছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসনের তদারকি ও পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পেঁয়াজের দাম অনেক কমেছে। ভারতের বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে সংকট হবে না। দামও বাড়বে না।
তিনি জানান, বর্তমানে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টনের মত মিয়ানমারের পেঁয়াজ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আসছে। সামনে আমদানির পরিমাণ আরো বাড়বে।
এদিকে, গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কমলেও সাধারণ ক্রেতারা এখনো খুশি নন। তারা চান পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২৫-৩০ টাকা।
জামালখানের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী তপন চক্রবর্তী জয়নিউজকে বলেন, যে পেঁয়াজ ১৫-২০ টাকায় কেজি কিনেছি সে পেঁয়াজ এখন ৭০-৭৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। দাম আরো কমতে হবে। তা না হলে মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। সরকারের এ বিষয়ে নজরদারি আরো বাড়ানো উচিত।
ব্যবসায়ীরা জানান, সবজি ও মসলা হিসেবে দেশে পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয়। দাম বাড়ার পর সবজি হিসেবে পেঁয়াজের ব্যবহার কমেছে। এখন মসলা হিসেবেই ব্যবহার হচ্ছে পেঁয়াজ। এতেও পণ্যটির স্বাভাবিক চাহিদায় ভাটা পড়েছে। আবার পেঁয়াজ পঁচনশীল পণ্য হওয়ায় বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না।
কারণ, এই পণ্যের ৮০ শতাংশই পানি। প্রতিদিন ওজন কমতে থাকে। সংরক্ষণের সময় কিছু পেঁয়াজ নষ্টও হয়। চাহিদা কমে যাওয়ায় অবিক্রিত পেঁয়াজের মান কমছে।