‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’- এ বাক্য এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল ব্যানার-পেষ্টুনে। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে এ বাক্য বাস্তবায়নে পুলিশের নানা উদ্যোগ সর্বসাধারণের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাইতো পুলিশ এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে সকল পুলিশি সেবা।
এরই ধারাবাহিকতায় নাগরিক হয়রানি রোধে এবার থানায় ‘জিডি করতে টাকা নয়’ এমন ব্যানার লাগাতে নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী। শুধু তাই নয়, এ সিদ্ধান্ত না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
নগরের কোতোয়ালি, খুলশী, আকবরশাহ ও বায়েজিদ থানা ঘুরে দেখা গেছে, ডিউটি অফিসারসহ থানার রুমগুলোর দেওয়ালে ঝুলছে ‘জিডি করতে টাকা নয়’ এমন ব্যানার।
তবে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে পাঁচলাইশ থানায়। সেখানে ‘জিডি করতে টাকা নয়’ এমন ব্যানারের পাশাপাশি ঝুলছে ‘জিডি/অভিযোগ/মামলা/পুলিশ ভেরিফিকেশন/পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ যেকোনো পুলিশি সেবা গ্রহণে টাকা লাগে না’।
পুলিশের এমন কার্যক্রম দেখে থানায় সেবা নিতে আসা নাগরিকরা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, পুলিশের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
এদিকে বিকাশে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়া নারী তাছলিমা বেগম আকবরশাহ থানায় আসেন অভিযোগ করতে। জয়নিউজের কথা হয় তাছলিমার সঙ্গে। তিনি বলেন, বিকাশের মাধ্যমে একটি চক্র আমার থেকে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে আমার প্রতিবেশি আমাকে থানায় অভিযোগ করতে বলল।
‘প্রথমে আমি হয়রানির ভয় ও থানায় টাকা দিতে হবে, এই ভয়ে অভিযোগ করতে চাইনি। পরে জানলাম এখন থানায় অভিযোগে কোনো টাকা লাগেনা। তাই থানায় এসে আমি বিনামূল্যে অভিযোগ করেছি।’
পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে আসেন হাবিবুর রহমান। তিনি জয়নিউজকে বলেন, পুলিশের প্রতি বেশিরভাগ মানুষেরই খারাপ ধারণা থাকে। মানুষ এখনো পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারে না। থানায় যেতে ভয় পায়। এসব ধারণা বদলাতে হবে। পুলিশের এমন উদ্যোগ, গণমানুষের ধারণা বদলাতে সহযোগিতা করবে।
আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জয়নিউজকে বলেন, আমরা অনেক আগে থেকে কোনো লেনদেন ছাড়া থানায় এমন সেবা দিচ্ছি। কিন্তু গতকাল আইজি স্যারের নির্দেশনার আমরা বড় করে থানায় ব্যানার লাগিয়েছি। জিডিসহ থানায় সকল ধরণের সেবা দিতে কোনো লেনদেন না করতে অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।
একই বক্তব্য কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনেরও। তিনি জয়নিউজকে বলেন, কোতোয়ালি থানায় এই ট্র্যাডিশন আমি অনেক আগে থেকেই চালু করেছি। আগে থানার দেওয়ালে কাগজে প্রিন্ট করে টাঙানো ছিল। সেইসাথে সেবা নিতে আসা নাগরিকদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন না করতে অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া ছিল।
পুলিশের কয়েকজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জয়নিউজকে জানান, জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করতে থানায় এসে হয়রানির স্বীকারের অভিযোগ নিত্যদিনের। লেনদেনের টাকা পরিমাণে খুব বেশি না হলেও এতে বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই জিডি করতে আর্থিক লেনদেন বন্ধের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে থানায় হয়রানিরোধে পুলিশের নীতিনির্ধারকরা নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান জয়নিউজকে বলেন, শুধু জিডি নয় পুলিশের সব সেবা দিতে টাকা নেওয়া অনৈতিক। টাকা-পয়সা কেউ নিলে সেটার দায়ভার তাকে নিতে হবে। কেউ অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার চাকরিও চলে যেতে পারে। আইজিপি স্যার কঠোরভাবে বলে দিয়েছেন, কোনো কিছুতেই আর্থিক লেনদেন করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটা দুরত্ব আছে। এই দুরত্ব কমিয়ে আনতে এই উদ্যোগ। আমরা অফিসারদের মুটিভেট করার চেষ্টা করছি যাতে তারা লেনদেনে না জড়ায়।