প্রথমে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তৈরি করা হয় ইমারত। এরপর আগুন লাগলেই সবার মুখে উঠে আসে নীতিবাক্য। তারপর হাতে নেওয়া হয় শত শত পরিকল্পনা। কিন্তু আগুনের রেশ কাটতে না কাটতেই হারিয়ে যায় এসব পরিকল্পনা আর নীতিবাক্য।
এদিকে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার নগরের খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জের বাজারে প্রতিদিন লেনদেন হয় শত কোটি টাকা। কিন্তু শত কোটি টাকার পণ্য রক্ষায় এখানকার ব্যবসায়ীদের নেই কোনো উদ্যোগ।
বিশ্লেষকরা বলছে, এখানে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসও অসহায়ের মতো দেখে থাকতে হবে! কারণ রাস্তাগুলো এত সরু অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িই ঢুকতে পারবে না।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, নগরে বহুতল আবাসিক ভবন কিংবা বাণিজ্যিক ভবনই শুধু নয় খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জে, টেরিবাজার, হাজারী গলি, রিয়াজুদ্দীন বাজার ও তামাকুমণ্ডি লেইনের মতো পাইকারি মার্কেট মুহূর্তেই অগ্নিকাণ্ডে মানুষের মৃত্যুকূপে পরিণত হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এখানকার মার্কেটে আগুনের ব্যাপারে কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই। রাস্তাগুলো এত সরু, অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িই ঢুকতে পারবে না। তার মধ্যে সরু রাস্তা দখল করে থাকে পণ্যবোঝাই গাড়ি। আবার বাজারগুলোর কোথাও আগুন লাগলে তা নেভানোর প্রয়োজনীয় পানির উৎসও নেই। সেইসঙ্গে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এসব মার্কেটে আগুন লাগলে বিপুল পরিমাণ সম্পদহানির আশঙ্কা আছে। ভবন থেকে বের হতে না পেরে ধোঁয়ার কারণেও মৃত্যুর শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মালিকরা ভবন নিমার্ণের সময় চলাচলের জায়গা রাখছে না। অপরিকল্পিতভাবেই চলছে সবকিছু। বড় কোনো দুর্ঘটনা হলে লাশের স্তূপ জমবে।
টেরিবাজার কাপড় দোকানদার মো. ইসমাইল জয়নিউজকে বলেন, টেরিবাজার এলাকায় যদি কোনো অগ্নিকাণ্ড হয়, মানুষ বাঁচার রাস্তা খুঁজে পাবে না। কেননা আগুন বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ভবনগুলো থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর রাস্তাগুলোতে গাড়ি কি চলবে, মানুষইতো হাঁটতে পারে না। সব মালিক টাকা চিনে কেউ এক ইঞ্চি জায়গা ছাড় দেয় না। মার্কেট ঘুরলে দেখবেন বাতাস আসার পর্যন্ত জায়গা নেই।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশন সভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালক সৈয়দ সগীর আহমেদ জয়নিউজকে বলেন, খাতুনগঞ্জসহ এর আশপাশের এলাকাগুলোর রাস্তা খুব সরু। শত বছর আগের মতো আছে সড়কগুলো। এখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি ঢুকতে পারবে না। মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে শত কোটি টাকার সম্পদ।
তিনি বলেন, আমরা বারবার এটা নিয়ে বললেও কারো কোনো মাথাব্যাথা নেই। তাই সিটি করপোরেশন, সিডিএসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দ্রুত নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করি।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসীম উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, এসব মার্কেটে আগুন লাগলে ভয়াবহতা খুব বেশি হবে। কারণ একটা মার্কেটের সঙ্গে অন্য মার্কেট সংযুক্ত এবং একাধিক গোডাউন ও সরু রাস্তার পাশাপাশি এখানে অগ্নিপ্রতিরোধ, অগ্নিনির্বাপণ ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেই। ফলে কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, এসব মার্কেটের মধ্যে বিশেষ করে নন্দনকানন ও লামাবাজার ফায়ার স্টেশন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটগুলো মারাত্মক ঝুঁকির কবলে রয়েছে। খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকুমণ্ডি লেইনের মার্কেটগুলোতে আড়ত, পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজার রয়েছে। এসব বাজারে আগুনের সূত্রপাত হলে শত কোটি টাকার ক্ষতি হবে। কিছুদিন আগে এ এলাকার ভেড়া মার্কেট আগুনে ভস্মীভূত হওয়ার পাশাপাশি ৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সর্বশেষ জহুর হকার্স মার্কেটেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার জয়নিউজকে বলেন, দোকানপাট গড়ে তোলা ছাড়াও বিল্ডিং আইন সংশোধনের আগে নগরে যেসব বাড়ি-ঘর নির্মিত হয়েছে তার সবগুলোই অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ এগুলোতে অগ্নিঝুঁকি এড়ানোর কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অথচ সংশোধিত বিল্ডিং আইন অনুযায়ী প্রতিটি ভবনে অগ্নিপ্রতিরোধক দরজা, ভূগর্ভস্থ ও ছাদে অগ্নিনির্বাপণের জন্য পানির ব্যবস্থা রাখা, একাধিক সিঁড়ি ও ধোঁয়া বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে।