শিশু আরাফাতকে হাত পা বেঁধে হত্যা করার পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। রোববার (২০ অক্টোবর) চকরিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারক আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা স্বীকার করেন হত্যাকারী মো. মানিক ও রায়হান।
মানিক মগনামা মিয়াজীপাড়ার আনোয়ার হোসেনের ছেলে ও রায়হান একই ইউপির দরদরীঘোনার আবু তাহেরের ছেলে ।
জবানবন্দিতে তারা আরও বলেন, শিশু আরাফাতকে দুপুরে কাদিমাকাটা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে নাস্তা করার কথা বলে ডেকে নেন খালাত ভাই রায়হান।
এ সময় তার সঙ্গে ছিল মানিক। বাড়ি থেকে রাস্তা পার হয়ে একটি অটোরিক্সা করে পেকুয়া চৌমহনীতে আসেন। ওই সময় শিশুটি কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, তারা খালাত ভাই রায়হানের বাড়িতে যাচ্ছে। মগনামার ফুলতালায় যাওয়ার পর নাস্তা করেন এবং গাড়ি বদল করে ইজিবাইক নিয়ে মগনামার কাজী মার্কেটে গিয়ে আবারো শিশুকে নাস্তা করান। সেখানে কলা আর পাউরুটি শিশুর হাতে দিয়ে অপেক্ষা করেন।
একটু অন্ধকার হলে মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন রাস্তা পার হয়ে মগঘোনার রাস্তা হয়ে যাওয়ার সময় শিশু আরাফাত বেশ আওয়াজ করে কান্না করতে থাকেন। বকা দিয়েও কান্না বন্ধ না হলে নির্জন ধান মাঠে গিয়ে শিশুটির হাত পা বেঁধে পেলেন। তখন মো. মানিক হাত পা ধরে থাকেন আর রায়হান গলা টিপে ধরেন।
একপর্যায়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে ধান ক্ষেতে তাকে রেখে সদর ইউয়িনের গোঁয়াখালীর মানিকের শ্বশুর বাড়িতে চলে আসেন। এরপর মুঠোফোনে ফোন দেন নিহত শিশু আরফাত ও হত্যাকারী রায়হানের খালা কাউসার বেগমকে।
শিশু আরাফাতকে ফিরে ফেতে চাইলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে বলে বলেন তারা। এর কোনো উত্তর না আসায় তারা ঘুমিয়ে পড়েন। আদালতে দেওয়া তাদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল আজম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করার বিষয়টি আমরা অবগত হওয়ার পর অজ্ঞাতনামা একটি অপহরণ মামলা রেকর্ড করি। যে মামলার বাদি শিশুর মা রুজিনা আক্তার। মুঠোফোনের নাম্বারের সূত্র ধরে গোঁয়াখালীর মাতবর পাড়া থেকে রায়হান ও মানিককে আটক করি।
বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত আটককৃত দুইজন বিভিন্নরকম তথ্য দিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করেন। শিশুকে উদ্ধার করতে তারা যেখানে বলেছে আমরা সেখানেই গিয়েছি। সর্বশেষ তাদের দেওয়া তথ্য মতে কক্সবাজারের একটি স্থানে অভিযানে গেলে তারা শিশুটিকে হত্যা করে মগনামা মগঘোনার একটি স্থানে রেখেছে বলে জানান। শিশু পরিবার ও অপহরণকারীদের নিয়ে মগনামা মগঘোনার ফসলী জমিতে অভিযান চালিয়ে শিশুর লাশটি উদ্ধার করা হয়।
শিশু আরাফাতের মা রুজিনা আক্তার জয়নিউজকে বলেন, আমার বোন কাউসার আক্তার আমাকে জানান ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু তারা আমার বুকের ধনকে আগেই মেরে ফেলেছে। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড আমরা মেনে নিতে পারছিনা। ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। তাদের বিচার আমরা দ্রুত দেখতে চাই।
রোববার দুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে নামাজে জানাযার পর দাফন করা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয়রা নামাজে জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ওমান প্রবাসী রুহুল কাদেরের শিশু সন্তানকে অপহরণ করা হয়। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার লাশটি উদ্ধার করে পেকুয়া থানা পুলিশ।