প্রকৌশলনির্ভর চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রতিনিয়ত যে পদ থেকে প্রকৌশল সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা দেওয়া হয় সেই পদেই (উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রকৌশল) দেড় বছর ধরে নেই কোনো প্রকৌশলী! অথচ গুরুত্ব বিবেচনায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পরেই এই পদের অবস্থান।
চট্টগ্রাম ওয়াসায় এভাবে খালি পড়ে আছে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পদ। এর মধ্যে বেশিরভাগ পদ পূর্ণ করা হয়েছে অন্য কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে। আবার কিছু পদে দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্তরা।
এ অবস্থায় দেখা দিচ্ছে নানা সংকট। যার প্রভাব পড়ছে গ্রাহক সেবায়। অথচ এই চট্টগ্রাম ওয়াসায় বাস্তবায়নাধীন আছে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প!
প্রকৌশল বিভাগ
উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রকৌশল) পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন শেষে গত বছরের মে মাসে অবসরে যান প্রকৌশলী রতন কুমার সরকার। দেড় বছর হতে চললেও গুরুত্বপূর্ণ এ পদে এখনও কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
প্রকৌশল বিষয়ে ধারনা না থাকলেও বাধ্য হয়ে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম হোসেন পালন করছেন অতিরিক্ত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (প্রকৌশল) দায়িত্ব।
আবার এক মাস দেশে ছিলেন না গোলাম হোসেন। তখন তাঁর মূল পদের (প্রশাসনের) দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দেওয়া হয় উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) নূরুল আলম চৌধুরীকে। আর গোলাম হোসেনের অতিরিক্ত পদে দায়িত্ব পালন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী ইয়াকুব সিরাজউদ্দৌলা।
সাবেক প্রধান প্রকৌশলী জহুরুল হক অবসরে গেছেন গত বছরের ২৮ অক্টোবর। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী ইয়াকুব সিরাজউদ্দীন নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন এক বছর। সম্প্রতি তাঁকে ভারমুক্ত করে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাকসুদুল হক কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেস (২) প্রকল্প পরিচালকের পাশাপশি অতিরিক্ত হিসেবে সংগ্রহ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আমিন মড-১ এর মূল দায়িত্বের পাশাপাশি এসইটিএমপি অতিরিক্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম সিডব্লিউএসআইএসপি প্রকল্পের ডিপিডি এবং পিডির দায়িত্বের পাশাপাশি সুয়্যারেজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিক্রয় বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুল আলম অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত উপ-প্রধানের (উন্নয়ন)। আরো আছেন ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে।
অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হয়েছে প্রকৌশলী রেজাউল আহসান চৌধুরীকে। নির্মাণ বিভাগের এই নির্বাহী প্রকৌশলীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রটোকল অফিসার পদে।
প্রকৌশলী সমিত পাল মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বের পাশাপশি আছেন ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পের দায়িত্বে।
প্রকৌশলী এন মোহাম্মদ আবুল বশর ডিজাইন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর মূল দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন পরিবহন পোলের। সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বিক্রয় বিভাগের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন নির্মাণ বিভাগ ২-এ।
প্রশাসন বিভাগ
দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় ওয়াসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ‘সচিব’ পদে যোগদান করেন আশরাফ উদ্দীন। চলতি মাসের ২ তারিখ উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য এক বছরের জন্য তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান। অতিরিক্ত হিসেবে এই পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক ড. পীযুষ দত্তকে।
খালি রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পদটিও। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মাহামুদুল হক নিজ পদের পাশাপশি সামলাচ্ছেন এই দায়িত্ব।
আবার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অবসরের শূন্য রয়েছে উপ-সচিব পদটি। সহকারী সচিব নাজিম উদ্দীন নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি এই পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
হিসাব বিভাগ
দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে খালি পড়ে আছে ওয়াসার ‘প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা’র মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটিও। উপ-প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জাকির হোসেন ভূইয়া বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে পদটি আঁকড়ে আছেন।
রাজস্ব বিভাগ
ওয়াসায় রাজস্ব কর্মকর্তা পদ আছে পাঁচটি। ইরফান সাজ্জাদ ৫-এর পাশাপাশি অতিরিক্ত-৩ এবং আলী হোসাইন ৪-এর পাশাপাশি অতিরিক্ত-১ এর রাজস্ব কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। এছাড়া রাজস্ব তত্ত্বাবধায়কের ১০টি পদের বিপরীতে দায়িত্ব পালন করছেন ৬ জন।
এমডি বললেন…
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রকৌশল) পদের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ায় নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। যোগ্যতা কিছুটা শিথিল করে আগামী বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে আবারো দরখাস্ত আহ্বান করে ওই পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে।
সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়োগ দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মন্ত্রনালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, সহসা ওই পদে কর্মকর্তা পাব।
তিনি আরও বলেন, জনবল সংকট এবং অভিজ্ঞতার কারণেই অনেক কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে মন্ত্রণালয় পদোন্নতি দিয়েছে। গেজেট হলেই তারা নতুন পদে যোগদান করবেন। এরপরও আগামীতে শূন্য পদে নতুন নিয়োগ দিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বের ভার কমিয়ে আনা হবে।