মাত্র ৬ মাসের মাথায় নুসরাত হত্যার রায় ঘোষণা হলেও দীর্ঘ নয় বছরে হয়নি ওয়াসিম হত্যা মামলার রায়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর কাজী মশিউর রহমান ওয়াসিমকে গলাটিপে হত্যা করে আসামি কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব। এবং নিহতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সিগারেটের আগুন দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে খুনি। খুনের ঘটনার সঙ্গে পরিবারের ৩ সদস্যের সম্পৃক্ততার সতত্যা পাওয়া যায়।
ওয়াসিম মিরসরাইয়ের মঘাদিয়ার ভূঁইয়া তালুক গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির কাজী মোশাররফ হোসেন বাবলু ও বিজলীর ২য় ছেলে। পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে ওয়াসিমকে হত্যা করে আসামিপক্ষ।
এ ঘটনায় একইদিন মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। খুনের আলামত হিসেবে ঘটনাস্থলে খুনীর ব্যবহৃত মুঠোফোন পাওয়া যায়। আলামতের জের ধরে একইদিন গ্রেপ্তার করা হয় আসামি পল্লবকে। ১৬৪ ধারা মোতাবেক আসামি খুনের বিষয়টি পুরোপুরি সত্য বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ মামলায় খুনির খুনের আলামত দেখে খুনি হিসেবে সাব্যস্ত করে ২০-২১ জন সাক্ষ্যও দেয়।
অথচ উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ থাকা সত্বেও দীর্ঘ নয়বছর পরও মেলেনি রায়। খুনের রায় নিয়ে চরম উদ্বিগ্নতায় ভুগছে ওয়াসিমের পরিবার।
ওয়াসিম হত্যার একজন সাক্ষী আবু তাহের জয়নিউজকে বলেন, ওয়াসিমকে যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন আমরা গ্রামবাসীরা সারারাত গাছগাছালি, পুকুরপাড়সহ সর্বত্র ওয়াসিমকে খোঁজ করি। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরদিন সকাল বেলা যখন গ্রামের এক মহিলা ঘাস কাটতে জমির আইল দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি একটা বস্তা দেখেন। তখন সেই বস্তায় ওয়াসিমের লাশ পাওয়া পান গ্রামবাসীরা। তার শরীর ছিল ক্ষত-বিক্ষত। সেখানে সিগারেটের আগুন দিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যা দেখে আমরা সবাই আঁতকে উঠি।
এত নির্মমভাবে কেউ কাউকে হত্যা করতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। ঘটনাস্থলে একটি মুঠোফোনও পাওয়া যায়। সেই মোবাইলটা ছিল আসামি পল্লবের। এরপর পুলিশ আসলে আমরা আলামতসহ আসামি পল্লবকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের কাছে।
ওয়াসিমের পিতা কাজী মোশাররফ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, আমার শিশুপুত্রকে যারা আমার বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে। নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তারা আজ স্বাভাবিক জীবনজাপন করছে। নয় বছরে হয়নি হত্যা মামলার রায়। অথচ মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে নুসরাত হত্যা মামলার কত সুন্দর একটা রায় হল।
যা দেখে নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে। অথচ আমার ওয়াসিমকে কি জবাব দেব আমি? তার খুনি যে এখনো বহালতবিয়তেই আছে। একজন পিতা হিসেবে এরচেয়ে মর্মান্তিক দুঃখজনক ঘটনা আর কি বা হতে পারে। তাই মহামান্য আদালত ও সরকারের কাছে আমার একমাত্র দাবি, আমার ওয়াসিমের হত্যার রায় যাতে দ্রুত হয়। এবং হত্যাকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবেই কেবল আমার নিষ্পাপ শিশুপুত্র ওয়াসীমের আত্মা শান্তি পাবে বলে জানান তিনি।