প্রচারণা নয়, প্রতারণা

জিন-ভূতের আছর সারানো থেকে শুরু করে সংসারের অশান্তি দূর- সব সমস্যাই তারা সমাধান করতে পারেন। প্রেমিক-প্রেমিকাকে বশে আনা কিংবা নিঃসন্তান দম্পতিকে সন্তানদানের মতো আশ্চর্য ক্ষমতাও আছে তাদের।

- Advertisement -

না, এজন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনো ওষুধ খেতে হবে না। অপেক্ষা করতে হবে না দিনের পর দিন। মাত্র ৭২ ঘণ্টায় পাওয়া যাবে সব সমস্যার সমাধান! তাও শুধু একটি তাবিজ কিংবা পানিপড়ার মাধ্যমে।

- Advertisement -google news follower

দেশের যে স্থানেই থাকুন না কেন বুকিং দিলেই পৌঁছে যাবে তাবিজ ও পানিপড়া। ভাবছেন, বিদেশে পাঠানো যাবে কি-না। অসুবিধা নেই, তাও তারা পাঠিয়ে দেবেন কুরিয়ারে। এজন্য আহামরি কোনো খরচও করতে হবে না! সবমিলিয়ে খরচ পড়বে মাত্র দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা।

নগরের প্রায় প্রতিটি স্থানে এসব কথা বলেই সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। তান্ত্রিক কবিরাজ ও মগা-বৈদ্যের নামে চলছে জমজমাট এ প্রচারণা। অবশ্য সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীদের কাছে এটি প্রচারণা নয়, ‘প্রতারণা’।

- Advertisement -islamibank

এদিকে এভাবে প্রকাশ্যে প্রচারণা (প্রতারণা) চললেও প্রশাসনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেই। এ অবস্থায় প্রচারণার ফাঁদে পা দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

সরেজমিন নগরের কাজীর দেউড়ি, জামালখান, লাভলেইন, চট্টেশ্বরী রোড, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাটসহ প্রায় সব স্থানেই মগা বৈদ্য ও কবিরাজদের পোস্টার দেখা যায়।

বেশিরভাগ পোস্টারের ভাষা প্রায় অভিন্ন। শুধু কবিরাজ আর মোবাইল নাম্বারে ভিন্নতা আছে। কবিরাজদের মধ্যে নজিত কুমার মগা বৈদ্য, রত্নামগ, মো. আবু নছর ভাই, চঙ্গামগ, স্বাধীন বৈদ্য বন কবিরাজ, কবিরাজ পারবতী মগা বৈদ্য, মো. সিরাজ গারোলি তান্ত্রিক ওঝা, তান্ত্রিক রিপন মগা বৈদ্য, সুজন মগ, রত্না রানী বৈদ্য, রাকেশ মগ ও কবিরাজ হাসান ভাই-এর নামে পোস্টার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

রোগী সেজে পারবতী মগা বৈদ্যের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন প্রতিবেদক।

প্রতিবেদক পারবতীকে বলেন, জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ আমাকে বান মেরেছে। আমি খুবই অসুস্থ। এখন আমি কী করব?

সব শুনে পারবতী মগা বলেন, আমার কাছ থেকে একটি তাবিজ ও পানিপড়া নিলে বান কেটে যাবে। এজন্য দুই হাজার ২০০ টাকা দিতে হবে।

রোগী (প্রতিবেদক) সরাসরি সাক্ষাৎ করে ওষুধ নেওয়ার ইচ্ছের কথা জানালে পারবতী বলেন, আমার সঙ্গে দেখা করা যাবে না। কারণ আমি অনেক দূরে থাকি।

যত দূরেই হোক রোগ সারানোর স্বার্থে দেখা করবো- প্রতিবেদক এমন বলতেই পারবতী বলেন, আমি থাকি বান্দরবানের বালাকাটার গহীন অরণ্যে। কোনোভাবেই সরাসরি দেখা করা যাবে না।

তবে তিনি রোগীকে আশ্বস্ত করেন, “আমি কুরিয়ারে তাবিজ পাঠিয়ে দেবো। ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই তাবিজের ফলাফল পাওয়া যাবে।”

এদিকে নগরজুড়ে কবিরাজদের লাগানো কয়েকটি পোস্টারে উল্লেখ রয়েছে রেজিস্ট্রেশন নম্বর। মজার ব্যাপার হলো, তিনজন ভিন্ন কবিরাজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর একই!

ওই তিনজন হলেন চঙ্গা মগ, সুজন মগ ও রত্না রানী বৈদ্য। তাদের সবার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১০৮৮৪/১২। যদিও তাদের তথ্য অনুযায়ী, রত্না থাকেন নারায়ণগঞ্জের বারদীতে, সুজন বান্দরবানের বালাকাটা এবং চঙ্গা বান্দরবানের মাইশের টং এলাকায়।

সমস্যা সমাধানের বাহারি প্রচারণা দেখে এক মগা বৈদ্যকে ফোন করেন শাহীন (ছদ্মনাম)। পারিবারিক কলহ থেকে রক্ষা পেতে তিনি ওই মগের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে একটি রাজমোহনী তাবিজ ও পানিপড়া নেন।

এরপর যা হলো শুনুন শাহীনের কাছেই- “আমার টাকাগুলোই জলে গেল। তারা বলেছে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফল দিবে। কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেল কিছুই হয়নি। লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছি না।”

নগরজুড়ে প্রচারণা চালিয়ে প্রতারণার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী জয়নিউজকে বলেন, প্রতিদিনই এসব পোস্টার সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। পোস্টার লাগানোর সময় কয়েকজনকে হাতেনাতে ধরে পিটুনিও দিয়েছি। কিন্তু এদের সঙ্গে উপরমহলের ভালো যোগাযোগ। কাউকে ধরলেই তারা বিভিন্ন মামা-খালুকে ফোন দেয়। তবে মেয়র মহোদয়ের কঠোর নির্দেশনা আছে নগরের কোথাও কোনো পোস্টার বা চিকা থাকতে পারবে না। এমনকি স্বয়ং মেয়র মহোদয়ের পোস্টার দেখলে সেটা সবার আগে ছিঁড়তে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এসব পোস্টার লাগানোর বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অভিযানে যদি কাজ না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন থেকে মামলা করা হবে।

একই প্রসঙ্গে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক জয়নিউজকে বলেন, এ ধরণের প্রতারণার কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

জয়নিউজ

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM