দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে অনেকে আগেই চট্টগ্রাম বন্দরে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল নেদারল্যান্ড। এবার ডাচ প্রতিনিধি দলের সফরে আশ্বাস পাওয়া গেল সেই সহায়তাকে আরো বিস্তৃত করার।
চট্টগ্রাম বন্দরের অন্যতম উন্নয়ন প্রকল্প বে টার্মিনালে বিনিয়োগে আগ্রহী নেদারল্যান্ড। সম্প্রতি বে টার্মিনালের নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন শেষে এ মনোভাব ব্যক্ত করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারলন্ডের রাষ্টদূত হ্যারি ভারউইজ। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত নেদারলেন্ডের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মন্নুজান খানম এবং ওমর হাজ্জাজ।
এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে ডাচ প্রতিনিধি দল। চট্টগ্রাম বন্দরে ডাচ সরকারের কী কী ব্যবসার সুযোগ আছে এবং উভয়পক্ষ একসঙ্গে কোন কাজ করতে পারে তা যাচাই করতে বন্দর ভবনে এ বৈঠক হয়। এতে বন্দরের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যান ও সদস্য (প্রশাসন, পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, পরিচালক প্রশাসন মো. মুমিনুর রশিদ, সচিব মো. ওমর ফারুক এবং উপ-সচিব মো. আজিজুল মওলা।
বৈঠকে প্রজেক্টরের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম প্রদর্শনের পাশাপাশি আগামীতে লক্ষ্য অর্জনে নেওয়া কার্যক্রম সম্পর্কে ডাচ প্রতিনিধিদের ধারণা দেওয়া হয়।
এবার নেদারল্যান্ডের টাগ বোট
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে আরো কয়েকটি টাগ বোট কেনা হবে। নেদারলন্ডের ডিমেন শিপইয়ার্ডের টাগ বোট বিশ্বে অন্যতম।
বন্দরের খনন কাজে যেসব জাহাজ এনেছে ইতোমধ্যে এগুলোর মেয়াদ ১০-১৫ বছর পেরিয়ে গেছে। চীন থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা টাগ বোট নিয়ে নানা অসুবিধায় আছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন বেড়েই চলছে এই জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ।
অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডারের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো জাহাজ কিনতে চাইলেই টেন্ডাবাজরা খুবই নিম্নমানের জাহাজ বন্দরকে ধরিয়ে দেয়। আর যুগ যুগ ধরে এর মাসুল দিতে হয় বন্দরকেই।
আবার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো কিছু কিনতে গেলেই নানা টালবাহানায় সময় নষ্ট করা হয়। অথচ জিটুজি (সরকার টু সরকার) প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এ সমস্যা দেখা যায় না। নেদারল্যান্ড থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে টাগ বোট কেনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
আরো যুগোপযোগী হবে ‘নিস’ প্রকল্প
চট্টগ্রাম বন্দরে যারা হাতে-কলমে কাজ করেন তাদেরকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে অনেক আগেই সহায়তার হাত বাড়িয়েছে নেদারল্যান্ড সরকার। ‘নেদারল্যান্ড ইনিশিয়েটিভ ফর ক্যাপাসিটি ডেভলবম্যান্ট ইন হায়ার এডুকেশন (নিস)’ প্রকল্পের আওতায় দক্ষতা বৃদ্ধির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের মার্চে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রকল্পটি আগামীতে আরো যুগোপযোগী করার ব্যাপারেও বৈঠকে আলোচনা হয়।
ব্লু কলার ট্রেনিং
কায়িক পরিশ্রম করে অনেকেই বন্দরকে বিশ্বের অন্যতম উন্নত বন্দরে নিয়ে আসতে কাজ করছে। তাদের হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে নেদারল্যান্ড রাষ্টদূতকে ব্লু কলার ট্রেনিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে ডাচ সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বন্দর সচিব বললেন…
বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জয় নিউজকে বলেন, নেদারল্যান্ড রাষ্টদূত মহোদয় আমাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া বে টার্মিনাল এলাকাও পরিদর্শন করেন। উনারা আমাদের সাথে একটি প্রকল্পে সহযোগিতা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে কীভাবে আগামীতে আরো গঠনমূলকভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পে বিনিয়োগসহ বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত হতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন। যার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ভারত অন্যতম।
জয়নিউজ