চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে ৩২ থাপ্পড় দেওয়ার মামলায় ফেঁসে গেলেন নগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিসহ সাত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।
শিক্ষককে মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় এ সাত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ অধ্যক্ষকে পেটানোর একটি ভিডিও জব্দ করেছে।
রনি ছাড়াও চার্জশিটে অভিযুক্ত অপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলেন-মজিবুর রহমান রাসেল, তানভীর মেহেদি মাসুদ, নেওয়াজ শরীফ অমি, আরিফুর রহমান মাসুদ, কিরণ ও নুরুল হুদা মিঠু। তারা নগরের বিভিন্ন কলেজ ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতে রয়েছেন। তদন্ত চলাকালে সাত আসামির কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তাই চার্জশিটে সাত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করার আবেদন করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে, ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি বাদী হয়ে অধ্যক্ষ জাহেদ খানের বিরুদ্ধে দায়ের করা অপর একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়েরের পর তদন্ত শেষে পুলিশ ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় ‘তথ্যগত ভুল’ উল্লেখ করে সেই মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আবেদনও করেছে পুলিশ।
জানতে চাইলে নগরের চকবাজার থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. বদিউল আলম জয়নিউজকে বলেন, অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে মারধর, অপরাধমূলক ভয়ভীতি প্রদর্শন ও কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে অনধিকার প্রবেশের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে তদন্তে। এ অপরাধকর্মে সাত আসামি জড়িত থাকায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করার জন্য চার্জশিটে আবেদন করা হয়েছে।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন-ফি বেশি নেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন নগর ছাত্রলীগ। এরমধ্যে অতিরিক্ত বেতন-ফি নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু করে তারা। তারই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ বিজ্ঞান কলেজে যায়। এসময় কলেজের কক্ষ পরিদর্শনে গেলে আসামিরা অধ্যক্ষকে দেখে চিৎকার শুরু করে। অধ্যক্ষ তাদের কাছে কলেজ ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশের কারণ জানতে চাইলে নুরুল আজিম রনির নির্দেশে তানভীর মেহেদি ও নেওয়াজ শরীফ তার ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে তাকে হত্যারও হুমকি দেয়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে আসামি আরিফুর রহমান ও কিরণ তাকে কিল-ঘুষি মারে। পাঁচ দিনের মধ্যে চাঁদার ২০ লাখ টাকা না দিলে অধ্যক্ষকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেয় আসামি নুরুল আজিম রনি।
এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকির মামলা দায়ের করেন বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খান জয়নিউজকে বলেন, সুষ্ঠু একটি তদন্তের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ এ তদন্তে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়নি। আমি দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
তিনি বলেন, আমি চাই রনির ডোপ টেস্ট করা হোক। কারণ সে একজন মাদকাসক্ত। সবসময়ই সে মাদক সেবন করে। এছাড়া মামলায় রনিসহ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে কলেজে প্রবেশ ও ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। এটিও সত্য নয়। সে অস্ত্র নিয়েই কলেজে এসেছিল এবং ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এ বিষয়টি আদালত ভেবে দেখবেন বলে আশা রাখি।
তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশিটে উল্লেখ করেছে, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানের কক্ষে অনধিকার প্রবেশ করে তাকে ৩২ থাপ্পড় ও মারধর করার সত্যতা পান। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও জব্দ করেন। এ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নগর ছাত্রলীগের পদও খোয়ান আসামি নুরুল আজিম রনি। পুলিশ রনির বিরুদ্ধে শিক্ষককে মারধর, অপরাধমূলক ভয়ভীতি প্রদর্শন ও কলেজে অনধিকার প্রবেশের তিনটি ধারায় অভিযুক্ত করেন। অপর আসামি মজিবুর রহমান রাসেল, তানভীর মেহেদি মাসুদ, নেওয়াজ শরীফ অমি, আরিফুর রহমান মাসুদ, কিরণ ও নুরুল হুদা মিঠুর বিরুদ্ধে বিজ্ঞান কলেজে অনধিকার প্রবেশ করার ধারায় অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। তবে মামলায় রনিসহ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে কলেজে প্রবেশ ও ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার (২৮ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগর হাকিম আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহেদের আগে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদকেও মারধর করেন রনি। সে মারধরের ঘটনায় সিসিটিভিতে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজও তখন ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে। ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মারধরের ঘটনাটি ঘটে। এরপর ১৯ এপ্রিল মারধরের শিকার রাশেদ নগরে পাঁচলাইশ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।