সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা গৃহায়ন ও গণপূর্তের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেই প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান পলাশ ফের আলোচনায়। এবার প্রকৌশলী পলাশের বিরুদ্ধে জাতীয় গৃহায়ন কর্তপক্ষের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলামের সঙ্গে ঔদ্ধত্য ও অশোভনের অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তও করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ অক্টোবর এক চিঠির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলামের অফিসে প্রবেশ করে একাধিক কর্মকর্তার উপস্থিতে চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঔদ্ধত্য ও অশোভন আচরণ, তার বদলির বিষয়ে প্রশ্ন করে উচ্চ বাক্য বিনিময় করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাকে বদলি না করার জন্য চাপ প্রয়োগকরেন। তার এ আচরণে চাকরি বিধানের সুস্পষ্ট অবমাননা, আশোভন ও গুরুদণ্ডনীয় অপরাধ। যার কারণে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা-কর্মচারী) আইনের ২০০৫ এর প্রবিধানের অনুসারে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম সাক্ষরিত চিঠি এ আদেশ কার্যকর করা হবে জানানো হয়।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান পলাশের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ১ এপ্রিল সোমবার নগর ভবনে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন তিনি। নগরীর হালিশহরএলাকায় পোর্ট কানেকটিং রোডের জায়গায় অবৈধভাবে কাঁচাবাজার বসিয়ে গণপূর্ত বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কমর্চারীরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। সড়ক নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কিছুদিন আগে এ জায়গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ওই স্থানে নালা নির্মাণ করতে গেলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়।
সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীদের বারবার ফেরত পাঠিয়ে দেন গৃহায়নের প্রকৌশলীরা। এ অবস্থায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য নগর ভবনে আসতে বলেন। গত ১ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রামসার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল আলমের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি টিম নগর ভবনে যায়। ওই টিমে ছিলেন সহকারী প্রকৌশলীআশরাফুজ্জামান পলাশও।
নগর ভবনের তিন তলার কনফারেন্স হলে ঘটনার সময় উপস্থিত একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, আবু তৈয়ব নামে সিটি কর্পোরেশনের এক নির্বাহী প্রকৌশলী ‘লে আউটে’ নালা নির্মাণের বিষয়টি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন মেয়রকে।
এ সময় পলাশ পেছন থেকে অনেকটা মেয়রের গায়ের ওপর এসে আবু তৈয়বকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি আপনার মতো বুঝিয়ে দিলে হবে নাকি। এদিকে দেন আমি বুঝিয়ে দিই।’ এই বলে ওই সহকারী প্রকৌশলী মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন।
একপর্যায়ে মেয়র বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে এ জায়গা অবৈধ দখলে ছিল। কাঁচাবাজার ছিল। কর্পোরেশন উচ্ছেদ করেছে। এখন সরকারি কাজে, জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা হবে। জায়গা যদি গৃহায়নের হয়, গৃহায়নের থাকবে। এতে তো সমস্যা নেই।’ তখন পলাশ চড়া গলায় বলেন, ‘আপনারা (সিটি করপোরেশন) কিভাবে অবৈধভাবে জায়গা দখল করেন। ফুটপাত দখল করেন।’
সহকারী প্রকৌশলীর এমন আচরণে হতভম্ব হয়ে যান মেয়র আ জ ম নাছির । তিনি বলেন, ‘আপনি কার সঙ্গে কথা বলছেন জানেন।’ মেয়র ওইসহকারী প্রকৌশলীকে ‘বেয়াদব’ সম্বোধন করে বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জ’। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাদারবাড়ীওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের ওই সহকারী প্রকৌশলীকে হল থেকে বের করে আনেন।
এব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট অফিসার এখলাস উদ্দিন বলেন, যে জায়গাটিতে সিটি কর্পোরেশন নালা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে মোটা অঙ্কেরউৎকোচের বিনিময়ে, ওই জায়গাটির অবৈধ দখলদারের হাতে বাজার বসানোর জন্য ছেড়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছিলেন সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান। এটি করতে না পেরেই তিনি (আশরাফুজ্জামান) মেয়রের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। ওইদিন কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।