রুনার দেওয়া হলো না এসএসসি পরীক্ষা

বখাটের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অপমানে আত্মহননের চেষ্টাকারী স্কুলশিক্ষার্থী রুনা আকতার ( ১৪) ছয়মাস মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

- Advertisement -

শিক্ষার্থী রুনা চিকদাইর শাহাদাৎ ফজল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

- Advertisement -google news follower

রুনা দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ও বুধবার ( ৬ নভেম্বর) ভোর ৬ টার সময়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

রুনার দেওয়া হলো না এসএসসি পরীক্ষা
বর্তমানে বিছানায় শয্যাশায়ী রুনা

জানা যায়, রুনা বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে অপমানে গলায় রশি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা দেখে তাকে ফাঁসির রশি থেকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে প্রাণে রক্ষা করলেও রুনা হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে বাকরুদ্ব হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, পটিয়া শিকলবাহা জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান বাড়ির কাজী নজরুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম অভির সঙ্গে গত ৩ এপ্রিল চিকদাইর নেওয়াজ গাজী (রাঃ) এর ওরশ উপলক্ষে মেলায় বেড়াতে যায়। অভি, আবদুল মন্নানের প্রতিবেশী রুবেলের খালাত ভাই। অভি রুবেলের বাড়িতে প্রায় আসা-যাওয়া করত। ওইদিন ওরশ উপলক্ষে অভি বেড়াতে আসেন।

- Advertisement -islamibank

একপর্যায়ে অভির সঙ্গে স্কুলছাত্রী রুনার সর্ম্পক গড়ে উঠে। রুনার বাবার দায়ের করা মামলার অভিযোগে জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময়ে চিকদাইর নেওয়াজ গাজী (রাঃ) এর ওরশ উপলক্ষে মেলায় স্কুলছাত্রী রুনাকে নিয়ে অভি বেড়াতে গেলে প্রতিবেশী নুরুল আমিনের ছেলে মঞ্জুর হোসেন (২২), কবির আহম্মদের ছেলে কফিল উদ্দিন (২০) মো. বশির ছেলে হেলাল (২০) ফয়েজ আলীর ছেলে বেলাল (১৯) সহ আরো অজ্ঞাতনামা কয়েকজন রুনা আকতারকে উত্যক্ত করে। এসময় রুনার পরণের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে, রুনাকে অপহরণ করার চেষ্টা করে। ওই সময়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে চিকদাইর শাহাদাৎ ফজল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকের হোসেন রুনা আকতারকে উদ্ধার করে।

রুনার দেওয়া হলো না এসএসসি পরীক্ষা
মেয়ের লাশের পাশে বসে মায়ের আহাজারী

রুনাকে উদ্ধার করার পর শিক্ষক জাকের হোসেন রুনার মা নয়ন বেগমেকে খবর দিলে রুনার মা, প্রতিবেশী সাকিব ও আত্মীয়রা এসে শিক্ষক জাকের হোসেনের কাছ থেকে রুনা আকতারকে নিয়ে যান।

এ ঘটনার ব্যাপারে রুনার পিতা আবদুল মন্নান রাউজান থানায় মামলা করার জন্য গেলে ডিউটি অফিসার আবদুল মন্নানকে আদালতে মামলা করার পরার্মশ দিয়ে মামলা নেয়নি বলে আবদুল মন্নান অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে গত ১৫ এপ্রিল ঘটনার ব্যাপারে চিকদাইর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে অভিযাগ করেন তিনি।

চিকদাইর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রিয়তোষ চৌধুরী আবদুল মন্নানকে ঘটনার ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানান আবদুল মন্নান।

মামলার বাদী আবদুল মন্নান প্রতিবেশী নুরুল আমিনের ছেলে মঞ্জুর হোসেন (২২), কবির আহম্মদের ছেলে কফিল উদ্দিন (২০) মো. বশির ছেলে হেলাল (২০) ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করেন। বাদীর এজাহারনামায় ফয়েজ আলীর ছেলে বেলাল (১৯) সহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে।

আদালত মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইকে প্রতিবেদন দেওয়ার নিদের্শনা দেন। মামলায় রুনাকে নিয়ে মেলায় বেড়াতে যাওয়া আরিফুল ইসলাম অভিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অভিকে মামলায় সাক্ষী করে আসামি বেলালকে অব্যাহতি দিয়ে করা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ কামাল আব্বাস মামলাটি তদন্ত করে ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে রুনা আকতারকে শ্লীলতাহানি করার ঘটনায় প্রতিবেশী নুরুল আমিনের ছেলে মঞ্জুর হোসেন (২২), কবির আহম্মদের ছেলে কফিল উদ্দিন(২০) বাশির ছেলে হেলাল ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ঘটনার ব্যাপারে চিকদাইর শাহাদাৎ ফজল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকের হোসেন বলেন, ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে আমি বাড়ির মেয়েদের জন্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে রান্না করা খাবার বিতরণ করি। এসময়ে বোরকা পড়া একটি মেয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী রাজারাম খালের পাড় দিয়ে একলা হাঁটার সময়ে আমি মেয়েটিকে ডেকে এনে তার পরিচয় জানতে চাই, মেয়েটি আমাকে তার বাড়ি হাটহাজারী এলাকায় বলে জানান। এসময়ে এলাকার লোকজন বলেন মেয়েটি চিকদাইর শাহাদাৎ ফজল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রুনা আকতার ও চিকদাইর মাওলানা বদিউর রহমানের বাড়ির আবদুল মন্নানের মেয়ে।

পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার মাতা নয়ন বেগমে ফোন করে মেয়ে রুনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে তার মা ও তার স্বজনেরা এসে রুনাকে নিয়ে যায়।

ছয়মাস ধরে রুনা মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে মারা গেলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় রুনার মা নয়ন বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেপায়েত উল্যাহ জয়নিউজকে বলেন, এ ঘটনার ব্যাপারে রুনার বাবা আবদুল মন্নান বাদী হয়ে আদালতে মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামকে দায়িত্ব দেন আদালত। পিবিআই এর সাব ইন্সপেক্টর মো. কামাল আব্বাস মামলাটি তদন্ত করে ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

জয়নিউজ/শফিউল/বিআর
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM