মানুষ নির্বিচারে পাহাড়, বন-জঙ্গল উজাড় করে দেওয়ার ফলে পাহাড়ে প্রাণীদের বসবাসের অনুপযোগী এবং চরম খাদ্য সংকট দিয়েছে। তাই বন্যপ্রাণীগুলো নিরাপদ আশ্রয় এবং খাদ্যের জন্য লোকালয়ে ছুটে আসছে।
এমনিভাবে খাবারের খোঁজে এসে হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় একটি মাছের প্রজেক্টে জালে আটকা পড়ে প্রায় ১০ ফুট দৈর্ঘে্যর একটি ‘পাইথন প্রজাতির’ অজগর সাপ।
শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে পৌরসভার ১১ মাইলের দি কিং অব হাটহাজারী ক্লাবের পাশে একটি মাছের প্রজেক্টের দারোয়ান গিয়াস উদ্দীন সাপটি দেখতে পায়। পরে ওই ক্লাবের মালিক সাপুড়ে দিয়ে অজগর সাপটি ধরে ডাঙ্গায় নিয়ে আসে।
এরপর বিষয়টি বন বিভাগের হাটহাজারীর ১১ মাইল ফরেস্ট বিটের স্টেশনের কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি জানানো হয়। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক অজগরটিকে মেরে ফেলার জন্য উদ্যত হয়। তবে ক্লাবের মালিক ও ম্যানেজারের হস্তক্ষেপে অজগর সাপটি প্রাণে বেঁচে যায়। পরে বন বিভাগে কর্মকর্তারা সাপটিকে উদ্ধার করে গহীন বনাঞ্চলে অবমুক্ত করে দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশি পাইথন বা ভারতীয় পাইথন প্রজাতি দীর্ঘ এবং বিষহীন সাপ। এটি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে দেখা যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Python molurus। এর অন্যান্য সাধারণ নাম হল কালো লেজের পাইথন, ভারতীয় অজগর এবং ভারতীয় পার্বত্য পাইথন। এই প্রজাতিটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই উপপ্রজাতিটি প্রধানত ভারত, দক্ষিণ নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এছাড়া মায়ানমারেও এই উপ প্রজাতিটি পাওয়া যায়। এটি বর্মী পাইথনের চেয়ে হালকা এবং এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ মিটারের (৯.৮ ফুট) মতো হয়।
এব্যাপারে জানতে চাইলে পৌর এলাকার ১১ মাইল হাটহাজারী বিট কাম চেক স্টেশন স্টেশন কর্মকর্তা ফরেস্টার সৌমেন বড়ুয়া জয়নিউজকে বলেন, হাটহাজারী পৌরসভার পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকা থেকে খাবারের খোঁজে অজগরটি মাছ খেতে মাছের প্রজেক্টে নেমে জালে আটকা পড়ে। অজগরটি উদ্ধার করার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। একইভাবে উর্ধ্বতন বন কর্মকর্তাদেরও জানানো হয়। উর্ধ্বতন বন কর্মকর্তাদের নির্দেশে দুপুরে অজগরটি হাটহাজারী ফরেস্ট বিট স্টেশনের পশ্চিমে গহীন বনে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
প্রায় ১০ ফুট দৈর্ঘে্য অজগরটি পাইথন প্রজাতির আদিম সাপ এমটা জানিয়ে হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার মো. ইসমাইল হোসেন জয়নিউজকে বলেন, এরা শিকারকে জোরে পেঁচিয়ে তার দম বন্ধ করে। এরপর মাথার দিক থেকে আস্ত গিলে খায়। খাবারের সন্ধানে অজগরটি লোকালয়ে আসতে পারে। এরআগেও বেশ কয়েকটি অজগর সাপ লোকালয় থেকে উদ্ধার করা হয়। উপজেলার কোথাও এ রকমের সাপসহ যেকোনো বন্যপ্রাণী উদ্ধার হলে তা ফরেস্ট বিটকে অবহিত করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি)প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, মানুষ নির্বিচারে পাহাড়, বন-জঙ্গল উজাড় করে দেওয়ার ফলে পাহাড়ে প্রাণীদের বসবাসের অনুপযোগী এবং চরম খাদ্য সংকট দিয়েছে। তাই বন্যপ্রাণীগুলো নিরাপদ আশ্রয় এবং খাদ্যের জন্য লোকালয়ে ছুটে আসছে। লোকালয়ে ছুটে আসা বেশির ভাগ প্রাণী হত্যার শিকার হয়। এভাবে চলতে থাকলে বিলুপ্ত হবে অনেক বন্যপ্রাণী। এতে করে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়।
তিনি আরও বলেন, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের সংশ্লিষ্টদের জরুরিভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। তবে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, ২৪ অক্টোবর বিকালে হাটহাজারীর উত্তর ফতেয়াবাদ এলাকার কালি মন্দিরের পাশের বিলে কয়েকজন যুবক মাছ ধরার সময় প্রায় ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি অজগর সাপ আরিফ নামে এক যুবকের পায়ে আটকে যায়। ওই সময় জাহেদুল ইসলাম নামে অপর এক যুবক অজগর সাপটি ধরে বিল থেকে ডাঙ্গায় নিয়ে আসে। পরে স্থানীয় দুই যুবক মো. জাহেদ ও মো. আরিফ অজগর সাপটিকে উদ্ধার করে হাটহাজারীর ১১ মাইলের ফরেস্ট বিটের স্টেশনের কর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেন।