দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম বলেছেন, দেশে কোনো দুর্নীতিবাজ থাকবে না, সরকার দুর্নীতিবাজদের রাখবে না।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দুদকের গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামীর সভাপতিত্বে গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ, দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়-১ এর উপরিচালক নুরুল ইসলাম, হোসাইন শরীফ, নগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম কমু ও সদস্য মো. আবু সাঈদ সেলিমসহ বন্দরের বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দুদক কমিশনার বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে অফিসগুলো কেমন সেবা দিচ্ছে তা জানতেই গণশুনানি করি। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানে কি অনিয়ম হচ্ছে- তা প্রতিষ্ঠানের প্রধানও জানেন না। গণশুনানি দুর্নীতির পথটি টিহ্নিত করে দেয়।
বন্দর চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে দুদুক কমিশনার বলেন, আজ গণশুনানিতে অভিযোগ উঠেছে ৫২টি। যেখানে দুর্নীতি হয় সেখানে যেন চেয়ারম্যান নজর দেন। আমদানিকারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সময়মতো যেন কনটেইনার ডেলিভারি নেন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫ হাজার স্কুলে সততা স্টোর করেছি মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে। যেখানে কোনো বিক্রেতা নেই। আমাদের সন্তানদের ভালো মানুষ করতে হবে। তবেই তারা আগামীতে ভালো দেশ গড়তে পারবে। মানুষকে অত্যাচার করে টাকা কামাইয়ের লক্ষ্য থাকলে হবে না।
আরো পড়ুন: মামলায় শতভাগ শাস্তি নিশ্চিত করতে চায় দুদক
বিশেষ অতিথি বক্তব্য বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি ১২-১৪ শতাংশ। যা জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি। প্রধানমন্ত্রী বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বন্দর অটোমেশন পদ্ধতি বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। কমেছে পণ্য পরিবহন খরচ। লয়েডস রেজিস্টারে ৬ ধাপ এগিয়েছে। এটি আইএসপিএস কমপ্লায়েন্স পোর্ট। বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ইয়ার্ডের সম্প্রসারণ হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কনটেইনার হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি সামাল দেওয়া। এর জন্য স্টেক হোল্ডারদের সহযোগিতা চাই।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মাহমুদুল হক অভিযোগ করে শুনানিতে বলেন, কনটেইনার লোড-আনলোড করতে বন্দরের অভ্যন্তরে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়। কয়েকজন শিপিং এজেন্ট মালিক এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
তখন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও শিপিং এজেন্ট মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিন, আমি সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বহিস্কা্র করব। তবে ১০ থেকে ১ নম্বরে জাহাজ আনতে কারা তদবীর করেন তা আপনারাই ভালো জানেন। অন্যায্য কোনো তদবীর করবেন না। সবাইকে নিয়মের মধ্যেই আসতে হবে।
বি এস এ এস চেয়্যারম্যান আহসানুল হক চৌধুরীর অভিযোগের ভিওিতে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বার্থিং মডেল চালু হচ্ছে। আগামীতে মোবাইলে জানা যাবে কোন জাহাজের পরে কোন জাহাজ বাথিং-এ পাবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামীতে রেফার কনটেইনারে প্রিপেইড মিটারের সংযোগ দেওয়া হবে। না হয় বন্দর বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
দুদকের চট্টগ্রামের পরিচালক মাহবুব হাসান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কাজ করে আসছে দুদক। গণশুনানি হচ্ছে সেবাগ্রহীতা ও দাতার মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি।
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম কমু বলেন, ওষুধ খাওয়ার চেয়ে অসুখ প্রতিকারই ভালো। কাউকে হেয় করার জন্য এ আয়োজন নয়, এটি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার আয়োজন।
গনশুনানির সভাপতি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী বন্দর কর্মকর্তা-কমর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দুর্নীতি যাতে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ না পায় সে বিষয়ে কাজ করছে দুদক। সরকার বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে। সরকার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাচ্ছেন। বিদেশের ভালো জিনিসগুলোই এদেশে প্রতিষ্ঠিত করুন।