আলাদিনের চেরাগের কথা সবার জানা। জাদুর সেই চেরাগের কারণে সাধারণ এক যুবক থেকে অসীম ক্ষমতাধর বনে যান আলাদিন। আলাদিনের চেরাগের গল্পের মতোই সাধারণ এক ব্যক্তি থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন জসিম।
না, আলাদিনের চেরাগ পাননি জসিম। তবে তিনি পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামকে। ছালামের আশীর্বাদেই রাতারাতি বদলে গেছে জসিমের জীবন।
মো. জসিম উদ্দিন, থাকেন নগরের মোহরা ওয়ার্ডের সিএন্ডবি এলাকায়। বর্তমানে তিনি চান্দগাঁও মাঝিরপাড়ায় অবস্থিত শাপলা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয়দের অভিযাগ, এ ক্লাবটিতে চলত জুয়ার আসর।
আরো পড়ুন: ছালামের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
অনুসন্ধানে জানা যায়, জসিম এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হলেও একসময় তাঁর তেমন কিছুই ছিল না। অতীতে তিনি নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা দাবি করতেন। কিন্তু মহানগর কিংবা ওয়ার্ড ছাত্রলীগেও কখনো তিনি কোনা পদে থাকার তথ্য মিলেনি। তবে একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা হওয়ায় সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল।
এদিকে ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল প্রথমবারের মতো সিডিএর চেয়ারম্যান পদে বসেন আবদুচ ছালাম। মূলত তখন থেকেই এলাকায় বাড়তে থাকে জসিমের প্রভাব। ছালামের নাম ভাঙিয়ে শুরু করেন একের পর এক অপকর্ম। ছালামের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এলাকাবাসীও তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলত না। ছালামের প্রভাব খাটিয়ে থানা পুলিশকেও ম্যানেজ করে রেখেছিলেন জসিম।
জানা যায়, আবদুচ ছালাম সিডিএ চেয়ারম্যান হওয়ার পর এলাকায় জমি দখল থেকে শুরু করে পতিতা ও মাদক ব্যবসারও গডফাদার ছিলেন জসিম। সিডিএর নাম ভাঙিয়ে চান্দগাঁও মাঝিরপাড়া, সিএন্ডবি ও বাহির সিগন্যাল এলাকায় তিনটি প্লট দখল করে নেন তিনি। এসব প্লটে ছোট ছোট ঘর ও দোকান তুলে গড়ে তোলেন কলোনি। যেগুলো থেকে ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পান প্রায় ১০ লাখ টাকা!
জমি দখলের পাশাপাশি জুয়া আর মদের ব্যবসাও আছে জসিমের। শাপলা ক্লাবে প্রতিনিয়তই বসে জুয়া ও মদের আসর। সরকারের ক্যাসিনো ও জুয়াবিরোধী অভিযানের পরও ক্লাবটিতে জুয়া ও মদের আসর বসছে প্রায়ই। এ জুয়া থেকেও জসিমের প্রচুর আয় হয়। জুয়ার টাকা দিয়েই সিএন্ডবি এলাকায় পাঁচতলা একটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেছেন জসিম। যেটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এদিকে খবর নিয়ে জানা যায়, জসিমের ছোট ভাই সাইফুউদ্দিন সাইফু ওয়ার্ড জামায়াতের নেতা। তার বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় তিনটি নাশকতার মামলা রয়েছে। ২০১৫ সালে হরতালে বোমা মারতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন সাইফু।
নিজের ও ভাইয়ের এসব অপকর্ম ঢাকার জন্য জসিম ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন আবদুচ ছালামকে। যেকোনো অনুষ্ঠানে ছালামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে ছবি তুলে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড দিতেন জসিম। এরপর সেগুলো এলাকাবাসীকে দেখিয়ে নিজেকে ছালামের ঘনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। এজন্য সাধারণ মানুষও ভয়ে তাঁর কোনো অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস করতেন না।
সিএন্ডবি এলাকার চায়ের দোকানদার সুমন মিয়া জয়নিউজকে বলেন, জসিমের লোকজন আমার কাছে এসে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে যায়। চাঁদা না দিলে এখানে ব্যবসা করতে দিবে না বলে হুমকি দেয়। জসিম যেহেতু ছালাম সাহেবের লোক তাই তাকে চাঁদা দিয়েই এখানে ব্যবসা করছি।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জসিম উদ্দিন। তিনি জয়নিউজকে বলেন, ছালাম সাহেব আমার নেতা সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তার নাম ভাঙিয়ে আমি কিছুই করিনি। আমার ব্যবসা আছে। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে নেই।
আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কাছে শো অফ করতেই স্ট্যান্ডবাজি ছালামের!
শাপলা ক্লাবে জুয়ার আসর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে জুয়া খেলার প্রশ্নই আসে না। এটি একটি সামাজিক সংগঠন।
জসিমের নানা অপকর্মের বিষয়ে জানতে সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।