রাউজানে পাহাড়ে পাহাড়ে বসতি গড়ে তুলছে রোহিঙ্গারা। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাউখালীর দুর্গম পাহাড়েও রয়েছে রোহিঙ্গাদের বসতি।
রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ সরকারি খাস জমি কিনে নিয়ে ঘর বাড়িয়ে দিব্যি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। আবার কেউ কেউ আরো একধাপ এগিয়ে। তারা চট্টগ্রাম শহরের ঠিকানা দেখিয়ে কৌশলে করে ফেলেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র। বাংলাদেশি পরিচয়েই তারা এখন এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পাহাড়ে পাহাড়ে রোহিঙ্গা
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বৃন্দাবনপুর, বানারস, অলির টিলা, দক্ষিণ ক্ষিরাম ও হলদিয়া রাবার বাগান, ডাবুয়া ইউনিয়নের মেলুয়া, রাধামধবপুর, ডাবুয়া রাবার বাগান ও মেলুয়ায় লোকমান চৌধুরীর খামারবাড়ি, ৭নং রাউজান ইউনিয়নের পূর্ব রাউজান, মুখছড়ি, চিকনছড়া ও ভোমরঢালা, কদলপুর ইউনিয়নের শমশেরপাড়া, ভোমরপাড়ার পূর্ব পাশে জয়নগর বড়ুয়াপাড়ার পূর্বে, হযরত আশরফ শাহ মাজারের উত্তরে এবং পাহাড়তলী ইউনিয়নের জগৎপুর আশ্রমের পাশের পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা বসতি।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায়ও আছে রোহিঙ্গা বসতি। উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ডিলাইট এলাকায় লোকমান চৌধুরীর খামারবাড়ি এবং তালতলায় কবির আহম্মদের খামারবাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা।
বিয়ে করে বাংলাদেশি
রাউজানের পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকার ঠিকানা দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করছে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে স্থানীয়রা জানান, ডাবুয়া ইউনিয়নের কলমপতি এলাকার মৃত কামাল ফকিরের মেয়ে বাচু আকতারকে বিয়ে করেছেন এক রোহিঙ্গা। বিয়ের পর ওই রোহিঙ্গা সাগরপথে মালয়েশিয়ায় চলে যায়। এরপর মালয়েশিয়া নিয়ে যায় তার স্ত্রী বাচুকে। এরপর বাচু তার ছোট বোনকে মালয়েশিয়া নিয়ে যায়।
জমি কিনে ঘর তৈরি, সঙ্গে এনআইডি
জমি কিনে ঘরবাড়িও নির্মাণ করছেন রোহিঙ্গারা। ৭নং রাউজান ইউনিয়নের পূর্ব রাউজান মুখছড়ি এলাকায় সরকারি খাস জমি কিনেছেন নুর মোহাম্মদ, সুলতান আহম্মদ ও রফিক নামের তিন রোহিঙ্গা। এখানে তারা সেখানে ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে দিব্যি বসবাস করছেন।
এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সুলতান আহম্মদের স্ত্রী জায়দা বেগম জয়নিউজকে বলেন, রাউজান রাবার বাগান এলাকায় তারা নুরুল ইসলামের দখলে থাকা আট শতক সরকারি খাস জমি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। এরপর সেখানে ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, জায়দা বেগম, সুলতান আহম্মদ, নুর মোহাম্মদ, রফিক এবং তাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য চট্টগ্রাম শহরের খুলশি এলাকার ঠিকানা দিয়ে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে জায়দা বেগমের পিতার নাম মীর আহম্মদ এবং মাতার নাম দয়াল খাতুন লেখা রয়েছে। তাঁর ভোটার আইডি নং ৭৭৭৩৪৮৫১৩৬।
এভাবেই নগরের বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়েছেন সুলতান আহম্মদ, নুর মোহাম্মদ, রফিক ও তাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
অস্ত্র তৈরির সঙ্গেও জড়িত রোহিঙ্গারা
গত ২০ নভেম্বর উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার ঘোড়া শামশুর টিলায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ সময় ডাকাতদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আহত হন রাউজান থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহসহ চার পুলিশ সদস্য। অভিযানে দুর্ধষ ডাকাত আলম ধরা পড়লেও জঙ্গলে পালিয়ে যায় তার সহযোগীরা। অভিযোগ রয়েছে, পালিয়ে যাওয়া যুবকরা রোহিঙ্গা। তারা দুর্ধর্ষ ডাকাত আলমের সঙ্গে অস্ত্র তৈরি কাজে জড়িত ছিল।
বন বিভাগ বলছে…
বন বিভাগের পাহাড়ি জমিতে রোহিঙ্গাদের বসবাসের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় রাউজান ঢালারমুখ বন বিভাগের স্টেশন অফিসার আবুদুর রশিদের। তিনি জয়নিউজকে বলেন, অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বন বিভাগের পাহাড়ি জমিতে রোহিঙ্গা বা যেকেউ অবৈধ দখল করে বসতি নির্মাণ করলে উচ্ছেদ করে বনায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে পূর্ব রাউজান ও কদলপুরে বন বিভাগের পাহাড়ি জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বনায়ন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জয়নিউজ