বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওয়াসায় বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন করলেও সেই হারে বাড়েনি জনবল। ইতোমধ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে আরো কয়েকটি বড় প্রকল্প। এসব প্রকল্পের জন্যও নিয়োগ দেওয়া হয়নি বাড়তি জনবল।
এ অবস্থায় বিভিন্ন প্রকল্পের লোকজনকে ওভারটাইম দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব প্রকল্পের কাজ। তবে বাড়তি কাজ করেও প্রাপ্য টাকা পাচ্ছে না বলে ক্ষোভ রয়েছে শ্রমিকদের।
তাদের অভিযোগ, শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নের কথা বলে যারা নেতা হয়েছেন, তারাও কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়েছেন।
অপরদিকে কর্তৃপক্ষ বলেছে, কৃচ্ছতা সাধন করতেই এ পন্থা নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
কর্তৃপক্ষের এ বক্তব্যের সঙ্গে সহমত শ্রমিক নেতাদেরও। তারা বলছেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে তারা রাজি করাচ্ছেন বাড়তি কাজ করাতে।
এই যখন অবস্থা তখন আবার ওভারটাইম নিয়ে দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)! তাই সবমিলিয়ে ওভারটাইম নিয়ে এখন ওভারটেনশনে আছে ওয়াসা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক কর্মচারী জয়নিউজকে বলেন, অফিসারদের অফিস শুরু হয় সকাল ৯টায়, শেষ হয় বিকেল ৫টায়। আমাদের কাজ শুরু হয় স্যারদের দুই ঘণ্টা আগে, শেষ হয় এক ঘণ্টা পরে। অন্য সব বিভাগ নিয়মিত সাপ্তাহিক বন্ধ পেলেও আমাদের সেই সুযোগ নেই। অনেক সময় বন্ধের দিন আমাদের ডিউটি আরো বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ওয়াসায় একাধিক বড় প্রকল্প বাস্তবায়াধীন থাকায় আমরা কেউ শিডিউল মেনে কাজ করতে পারি না। সরকার আমাদের বেতন-ওভারটাইম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রাপ্য ওভারটাইম নিয়ে নানা তালবাহানা করে। আমাদের নেতারাও উনাদের দলে ভেড়ায় আমরা অসহায়।
শ্রমিকদের ক্ষোভের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (১০০৮) সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলামের কণ্ঠেও ছিল কর্তৃপক্ষের সুর। তিনি জয়নিউজকে বলেন, অন্য অফিসে হলে একজন ড্রাইভার মাসে ২৫০ ঘণ্টা ওভারটাইম পেতেন। কিন্তু ওয়াসার সম্পদ সীমিত তাই তাদের বুঝিয়ে অনেকটা বাধ্য করেছি কম ওভারটাইম নিতে।
বাড়তি ওভারটাইমের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রধান প্রকৌশলী মাকছুদ আলম জয়নিউজকে বলেন, আমাদের লোকবল কম থাকাতে ওভারটাই দিতে হয়। আমরাতো বুষ্টার, পাম্প প্ল্যান্ট বন্ধ করতে পারি না। সীমিত জনবল দিয়ে ২৪ ঘণ্টা এসব চালু রাখতেই ওভারটাইম বেড়ে যায়।
এদিকে শ্রমিকদের অভিযোগ পরোক্ষভাবে স্বীকার করেন ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম হোসেন। তিনি জয়নিউজকে বলেন, সরকার চট্টগ্রাম ওয়াসায় তিনটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ২, ভাণ্ডালজুরি প্রকল্প এবং সুয়্যারেজ প্রকল্প। এগুলোর জন্য আলাদা কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন প্রকল্পের জনবল দিয়েই প্রকল্পগুলো চালাতে হচ্ছে। তাই ওভারটাইম বেড়ে গেলেও তাদের সেভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিকরা সপ্তাহে দুই দিন ছুটি পায়। এছাড়া আছে নৈব্যক্তিক ছুটি, অর্জিত ছুটি, বিনোদন ছুটি। আমাদের শ্রমিকরা এসব ছুটি ভোগ করতে পারেন না। ওভারটাইম দিতে হয় বেতনের দ্বিগুণ। এছাড়া রাতের শিফটে অতিরিক্ত মজুরি দেওয়ার বিধানতো আইনেই আছে।
সম্প্রতি অতিরিক্ত ওভারটাইম প্রদান অভিযোগ তদন্তে ওয়াসায় এসেছিলেন দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমডি গোলাম হোসেন বলেন, আমরা আইন মেনেই কর্মচারীদের ওভারটাইম দিয়েছি। বলতে গেলে আরো কম দিয়েছি। এর স্বপক্ষে তাদের (দুদক) চাহিদামতো ডকুমেন্ট দিয়েছি।
হিসাব বিভাগের তথ্যমতে, আনুপাতিক হারে কমে আসছে ওভারটাইমের পরিমাণ। চলতি বছরের আগস্টে ৩৩৪ জন কর্মচারীর ৪০ হাজার ৬১৪ ঘণ্টা ওভারটাইমের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৩ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৩২৩ জনের ৩২ হাজার ৭৩৩ ঘণ্টার বিপরীতে ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৯৬ টাকা এবং অক্টোবরে ২৬৬ জন কর্মচারীর ২৫ হাজার ৭৩৫ ঘণ্টার বিপরীতে ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪১ টাকা ওভারটাইম দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, কোনো অতিরিক্ত ওভারটাইম কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। বরং আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে অনেক কম দিচ্ছি। শ্রমিক ইউনিয়নকে বুঝিয়েছি ওয়াসাকে বাঁচাতেই আয়ের সঙ্গে মিল রেখে শ্রমিকদের কম ওভারটাইম দিচ্ছি। আমাদের এই কৃচ্ছতা সাধনের জন্য গতবার ওয়াসার সম্মানিত বোর্ড সদস্যরা আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
শ্রমিকদের ক্ষোভের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাপ্য পেলে সবাই খুশি হয়। শ্রমিকদের প্রাপ্য ওভারটাইম দিতে পারছি না বলে তাদের মনে ক্ষোভ জমা স্বাভাবিক। তবে আমি ওয়াসার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানাই এত কম পেয়েও তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বির্নিমাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
জয়নিউজ