আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল তার সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। আর দেখেন নতুন জন্ম হওয়া আমার সন্তান কতবড় দুর্ভাগা যে জন্মের পর নিজের জন্মদাতা পিতাকে পর্যন্ত এক পলক দেখতে পারল না।
সম্প্রতি বিলাইছড়িতে প্রতিবেশির দায়ের কোপে ছোট ভাইসহ নিহত হন গ্রাম পুলিশ সদস্য দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা। নিহত দীপংকরের স্ত্রী অঞ্জনা তঞ্চঙ্গ্যার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করতে গেলে কান্নাজড়িত কন্ঠে এসব কথা বলেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোমবার (২ ডিসেম্বর) আনুমানিক ভোর ৪.৪৫ মিনিটে দীপংকরের মৃত্যুর তিনদিন পর তার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে মা ও ছেলে উভয়েই বর্তমানে সুস্থ আছে।
অঞ্জনা বলেন, সদ্য জন্ম হওয়া ছেলে সন্তান ছাড়াও তাদের ঘরে এ্যানি তঞ্চঙ্গ্যা নামে সাত বছরের আরও একমেয়ে রয়েছে। সে সামনের বছর তৃতীয় শ্রেণীতে উঠবে। কিভাবে মেয়ের লেখাপড়ার করছ যোগাড় করব বুঝতে পারছি না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে অঞ্জনা বলেন, একদিকে স্বামীর মৃত্যুর শোক সামলাব, নাকি দুই সন্তান নিয়ে কিভাবে জীবনযাপন করব সেই চিন্তায় আছি। কারণ সদ্য জন্ম দেওয়া শিশুর জন্য এখন কোন কাজ কোনো কাজ করতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমার স্বামী গ্রাম পুলিশ সদস্য ছিল। তিনি যতদিন ছিলেন সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাই তিনি সরকারের কাছে তার দুই সন্তানের লেখাপড়ার ও পরিবারের ভরণপোষনের জন্য সহযোগিতা কামনা করেন।
এছাড়াও তার স্বামীর আত্মা শান্তির জন্য প্রশাসনের কাছে হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২৯ নভেম্বর বিলাইছড়ির কুতুবদিয়া গ্রামে গরু দিয়ে বাগানের ফলগাছ নষ্ট করাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী লক্ষীজয় মার্মার ধারালো দায়ের কোপে গ্রাম পুলিশ সদস্য দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা (৩০) ও ছোট ভাই শ্রীকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (২০) নিহত হয়। এই ঘটনায় নিহতদের বড় বোন সোনা বালা তঞ্চঙ্গ্যা (৩৭) ও তার ছেলে প্রশান্ত তঞ্চঙ্গ্যাও (১২) গুরুতর আহত হয়। আহতরা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এই ঘটনায় ৩০ নভেম্বর নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লক্ষীজয় মার্মাকে প্রধান আসামি করে মোট তিনজনের বিরুদ্ধে বিলাইছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।