২০১৯ সালে বছরজুড়ে বিভিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল বিএনপির। কোনোটি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, আবার কোনোটি সরকারের পতন ঘটনার। এমনকি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকারকে আলটিমেটামও দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু দিন শেষে সব আন্দোলনই সীমাবদ্ধ থেকেছে শুধুই হুংকারে।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বছরব্যাপী বিএনপির কোনো আন্দোলনই আলোর মুখ দেখেনি। রাজপথে আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন হয়নি। সবমিলিয়ে হালে বিএনপির অবস্থা- ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার।
কেন্দ্রঘোষিত সব কর্মসূচিই পালন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। তবে তাদের সব কর্মসূচিই সীমাবদ্ধ ছিল নগর বিএনপি কার্যালয় কাজির দেউরি নাছিমন ভবন ঘিরে।
দলের চেয়ারপারসনের মুক্তিসহ পাশাপাশি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খুন-গুম থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা, নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা থেকে পরিত্রাণসহ বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ছিল বিএনপির।
দলের নেতারা প্রতি ঈদের পর আন্দোলনের হুংকার দিলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন ছিল না। এমনকি খালেদা জিয়া মুক্তির দাবিতে সরকারকে দেওয়া তাদের আলটিমেটামও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। নগর বিএনপির কর্মসূচি সীমানা ছিল নাছিমন ভবনের চার দেওয়ালের মধ্যে।
তবে বিএনপির আন্দোলনকে অসফল মানতে নারাজ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবের রহমান শামীম জয়নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিএনপির চলমান আন্দোলনের বড় সফলতা হচ্ছে জনসমর্থন আদায়। আমরা সেটা পেরেছি। আন্দোলন করতে করতে আন্দোলন সফল হয়। আশা করি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।
তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্যের মাধ্যমেই ভোটবিহীন অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে।
বাংলাদেশে কোনো আন্দোলনই বিফল হয়নি মন্তব্য করে শামীম বলেন, বিএনপির একটি দুর্বলতা আছে। সেটি হলো, বিএনপি কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে। তবে আমাদের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ঐকমত্য পোষণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম থেকে বিএনপির কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সাড়া ছিল। যেকোনো সময় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্যদিয়ে অবৈধ সরকারের পতন করবো।
এদিকে বিএনপি সফল উল্লেখ করে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর জয়নিউজকে বলেন, আন্দোলন এক দিনে হয় না। আবার দিন-তারিখ ঠিক করেও আন্দোলন হয় না। তবে আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। জনগণও আমাদের পাশে আছে। এখন নিভৃত শহর-গ্রামের চায়ের দোকানেও সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে কথা হচ্ছে। বিরোধী দলের আন্দোলনের কারণেই মানুষ এসব বিষয়ে সচেতন হয়েছে। মানুষ যে জেনেছে, এটাই বিএনপির সফলতা।
তিনি বলেন, বিএনপি সচেতনভাবেই হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি এড়িয়ে নতুন নতুন ধারার কর্মসূচি দিয়েছে। আর এভাবেই সরকারকে চাপে ফেলতে তারা সক্ষম হবেন বলেও তিনি মনে করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বক্কর বলেন, আমরা নাছিমন ভবনের চার দেওয়ালে মধ্যে ছিলাম না। বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশি তাণ্ডবের মধ্যদিয়ে আমরা সভা-সমাবেশ করেছি। আমরা নগরজুড়ে আন্দোলন করেছি। আন্দোলন করতে গিয়ে হাজারো নেতা-কর্মী মামলা-হামলার শিকার হয়েছে।
কেন্দ্রের নির্দেশে দলকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালি করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে ৪১টি ওয়ার্ডে কমিটি করেছি। এগুলো আমাদের সফলতা। আশা করি, নতুন বছর নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন করবো।
কেন্দ্রঘোষিত সব কর্মসূচি পালন করা হয়েছে উল্লেখ্ করে নগর বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক ঈদ্রিস আলী জয়নিউজকে বলেন, বিএনপি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। গত ১৩ বছর সরকার কোনোভাবে বিএনপিকে বেকাদায় ফেলতে পারেনি। কারণ জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে। জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে বিএনপি। আমরা বছরজুড়ে আন্দোলন করেছি। আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে অবৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবো।
তিনি আরো বলেন, ‘স্বৈরাচার হটাও, দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ স্লোগানকে ধারণ করে নতুন বছরে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
জয়নিউজ