হালদা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী বেশ কয়েকটি চক্র এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ নদীতে সারাবছর প্রশাসনের অভিযানে বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও এবার চক্রগুলো মধ্যরাতে (বিশেষ করে রাত ১২টার পর) বিশেষ কৌশলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাটহাজারী উপজেলার মেখল ইউনিয়নের এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিশেষ অভিযানে এমন চিত্র দেখা যায়।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন। এসময় বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত প্রায় ৫শ’ মিটার পাইপ ধ্বংস করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য এক লাখ টাকা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, হালদায় সারাবছর ধরে চলা অভিযানে বালু উত্তোলন বন্ধ হলেও এবার কৌশল পাল্টে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। আগে নদীর পাড়ে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করলেও এবার মেখল ইউনিয়নের রুহাল্লাপুর এলাকায় নদীতে পাইপ বসিয়ে ১ কিলোমিটার দূরে ড্রেজারের সঙ্গে সংযোগ করে বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। রাত ২টার পর থেকে সকাল পর্যন্ত চলে বালু উত্তোলনের কাজ।
তবে অভিযানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চক্রের কাউকে পাওয়া না গেলেও স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস তরফদার নামে এক বালু ক্রেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে বলেও জানান ইউএনও রুহুল আমিন।
জানা গেছে, হাটহাজারীর মেখল ইউনিয়নের রুহুলাপুর সুইচ গেইট, সত্তার ঘাট, মদুনাঘাট, মাদার্শা, গড়দুয়ারা, ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া ও রাউজান উপজেলার মাকামী পাড়া, হালদার চর, মঈশকরম, পশ্চিম বিনাজুরী, উরকিরচর, আবুর খীল, মগদাই, কাগতিয়া, কচুখাইন, কোতয়ালি ঘোনা, দক্ষিণ গহিরা, অংকুরী ঘোনা, নদীমপুরসহ ফটিকছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে রাতের আধারে কখনো ড্রেজার বসিয়ে, আবার কখনো ভিন্ন কায়দায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে।
এদিকে হালদার তীরবর্তী এলকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বিরতিহীনভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। বালি উত্তোলনে নদীর বিভিন্নস্থানে ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের ঘর-বাড়িসহ ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া কয়েকটি ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে হালদার ভাঙ্গনের ফলে হুমকিতে পড়েছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, হালদা নদীতে মা-মাছের অবাধ বিচরণ। তাই নদী থেকে ড্রেজার বা অন্য কোনো মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা ঠিক নয়। এতে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পরিবেশ তথা মা-মাছের অবাধ বিচরণ, মা-মাছ মারা যাওয়া ও নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।