অভিযোগটা অনেক পুরনো- একই আদর্শের হলেও দুই রাজনীতিবিদের অবস্থান দুই মেরুতে। তবে অভিযোগটাকে মিথ্যে প্রমাণ করতে তাঁরা দু’জন বসলেন একই টেবিলে। শুধু তাই নয়, শপথ নিলেন একযোগে উন্নয়নেরও! একইসঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিলেন পরষ্পরকে সহায়তার।
আলোচিত ওই দুই রাজনীতিবিদের একজন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। অন্যজন নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির শক্তিশালী এই দুই নেতাকে এক টেবিলে বসানো দলের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল তেমনি জরুরি ছিল চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য।
এদিকে দুই প্রভাবশালী নেতাকে একত্রিত করতে মূল ভূমিকা পালন করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তাঁর মুঠোফোনেই শুক্রবার নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দিন কথা বলেন চউক চেয়ারম্যান আব্দুছ ছালামের সঙ্গে। ওই কথোপকথনে তাঁরা আজকের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বৈঠকের ব্যাপারে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন জয়নিউজকে বলেন, শুক্রবারে আমরা মেয়র সাহেবের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। বৈঠকে মেয়র সাহেবকে বলেছি নির্বাচনের আগে আপনাদের মধ্যে সমন্বয় করা জরুরি। মেয়র সাহেব এ প্রস্তাবে সম্মতি জানালে আমি ছালাম সাহেবকে ফোন করি। আমার মোবাইল থেকে মেয়র সাহেব ছালাম সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন। সোমবার বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়।
খোরশেদ আলাম সুজন আরো বলেন, বৈঠকে একসঙ্গে বসে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার ব্যাপারে দুই নেতা একমত হয়েছেন। নির্বাচনের আগে কারো সঙ্গে দূরত্ব রাখার সুযোগ নেই। একসঙ্গে অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।
অবশেষে বৈঠক
সোমবার সকাল ১১টার দিকে চসিক কনফারেন্স রুমে নগর আওয়ামী লীগের এ দুই নেতা একসঙ্গে মিলিত হন। এ মাহেন্দ্রক্ষণে অংশীদার হন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, অ্যাডভোকেট সুনীল সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, হাসান মাহমুদ হাসনী, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলমসহ নগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা।
বৈঠকে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের প্রশ্নে এক হয়েই চলতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার জনগণের সরকার। উন্নয়নের জন্য যেন জনগণের কষ্ট না হয় সেজন্য দুই জনকে এক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের বিনয়ের সঙ্গে বলছি, প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব আপনাদের দিয়েছেন সে দায়িত্ব পালন করতে দুই জনেরই সমন্বয় প্রয়োজন। যদি সমন্বয়ের অভাব থাকে আমাদের বলুন। আমরা সহযোগিতা করবো।
নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সিডিএ ও সিটি করপোশনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনো তর্ক-বিতর্ক নেই। আমরা একসঙ্গে নগরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। চট্টগ্রামবাসীকে বসবাসের একটি ভালো পরিবেশ দিতে চাই।
তিনি আরো বলেন, সামনে নির্বাচন, আমাদের কঠিন পরীক্ষা। এটি আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। আমাদের মাঠে নামতে হবে। কারণ স্বাধীনতাযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তি আবারো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো ঘটনার পরিকল্পনা করেছে। তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হবে না।
নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম বলেন, অনেকে আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব রয়েছে বলে মনে করেন। যিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বানিয়েছেন, তার দলের সঙ্গে দূরত্ব প্রশ্নই উঠে না।
তিনি বলেন, নিজের কোনো যোগ্যতায় আমি সিডিএ চেয়ারম্যান হইনি। শুধু আওয়ামী লীগ কর্মী ছিলাম বলেই সিডিএ চেয়ারম্যান হয়েছি। আমরা আমাদের অঙ্গীকারের মধ্যে সব কাজই শেষ করতে পেরেছি। মানুষ বলতে পারবে না, আমরা এ কাজটি করিনি। ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নের কাজ চলছে চট্টগ্রামে। এসব প্রকল্পের কাজ পরিচালনার পাশাপাশি জনগণের দুর্ভোগ কীভাবে কমানো যায় তা নিয়েও ভাবছি।