শিক্ষিত জনশক্তিকে কাজে লাগাতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে রাউজানের কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের মেধাবী সন্তানরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বিদেশ চলে যাচ্ছে। অথবা কেউ বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সেখানেই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু কেন। কেন আমরা আমাদের মেধাবী সন্তানদের ধরে রাখতে পারছি না। আমি মনে করি, আমাদের দেশের মেধাবীদের ধরে রাখার মত কোনো ভিশন নেই বলে এমনটি হচ্ছে। অথচ চীন ও ভিয়েতনামে এমনটি মোটেও হয় না। আর মালয়েশিয়ায় এ ব্যাপারে একটি প্রকল্পও আছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদেরও ভাবার সময় এসেছে।
ফজলে করিম বলেন, আমি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি। সেখানেও নীতিগত পরিকল্পনা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে। ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন চালুর জন্য দাপ্তরিক প্রয়োজনীয় কাজ শেষ হয়েছে। আগামী চার বছরের মধ্যে এটি চালুর আশা রাখছি। এটি চালু হলে মানুষ দুই ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করতে পারবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম থেকে চুয়েট হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত রেল লাইন চালুর জন্যও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, রাউজানে অনেক গর্বিত সন্তান আছেন। কোথাও গেলে এসব গর্বিত সন্তানদের নাম শুনলে বুক ভরে যায়। এতে করে রাউজাবাসী সম্মানিত হচ্ছে, সঙ্গে চট্টগ্রামবাসীও। এ অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ভিশন নির্ধারণ করে পরিকল্পনা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের জীবনে কিছু কিছু প্রেরণামূলক বক্তব্য দরকার হয়। আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যও একটা প্রেরণামূলক বক্তব্য বলে আমি মনে করি। এখানে জনগণের কল্যাণে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা আছে, সাধারণ মানুষের কথাও আছে। আবার সরকারি চাকরিজীবীদের সীমাবদ্ধতা, চাকরি মেয়াদকাল এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কাজ না করানোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও বললেন। সব মিলে একটা অনুপ্রেরণা অনুভব করছি।
বিশেষ অতিথি ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা অনুষ্ঠান বড় পরিসরে হলে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব থাকে। সাবেক সফল শিক্ষার্থীদের দেখে বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণ পাবে। বিষয়টি আমি অনেক বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও দেখেছি। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মিলনমেলায় এটি প্রযোজ্য বলে আমি মনে করি।
রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, রাউজানের উন্নয়ন আজ দেশের জন্য একটি উদহারণ। ইচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকলেই যে এলাকার জন্য কিছু করা যায়, তৃণমূলের একটি উপজেলাকে আমূল পরিবর্তন করা যায়, আজকের রাউজানই তার প্রকৃষ্ট উদহারণ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, হালদা নদীকে জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণার প্রস্তাব দিতে ২০০৯ সালে আমি আজকের প্রধান অতিথির কাছে আবেদন করি। তখন তিনি মৎস্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাব দেন। আজ প্রায় ১১ বছর পর সেটি বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। এটি হালদা নদী এবং চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি বড় অর্জন।
কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল অব বাংলাদেশের (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিলনমেলায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) নিজাম উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী।
কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির মিলনমেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী এবং সমিতির সভাপতি বিশ্বজিত ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় মিলনমেলায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব সাইফুল্লাহ আনছারী।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তসলিম উদ্দিন চৌধুরী, প্রাক্তন ছাত্র সমিতির উপদেষ্টা সদস্য এসএম ইউসুফ, উরকিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার সোহেল, প্রাক্তন ছাত্র সমিতির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ নজমুল হক ও মোবারক শাহ চৌধুরী।