ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক গভীর বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাইজভান্ডারী একাডেমীর উদ্যোগে আয়োজিত ত্রয়োদশ শিশু কিশোর সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনিন্দ্য ব্যানার্জী বলেন, ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম পরম বন্ধু। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সেই সহযোগিতার হাত এখনো চলমান রয়েছে। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি সকলকে বিস্ময় করেছে। আমরা চাই বাংলাদেশের এ অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের মতো বাংলাদেশেও হিন্দু মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মের মানুষরা শান্তিপূর্ণভাবে ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে। আমি গত কিছুদিন আগে হাইকমিশনার ম্যাডামসহ মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ পরিদর্শন করেছি। মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ অসাম্প্রদায়িক মিলনক্ষেত্র। যেখানে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে মিলিত হয় এবং সৃষ্টিকর্তার করুণা লাভে প্রার্থনা করেন। মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের যিনি প্রবর্তক তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। এছাড়া হযরত জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীও অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য কাজ করেছেন। তাঁর একটি বাণী রয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন, মাইজভাণ্ডার প্রাচ্যের বায়তুল মোকাদ্দেস, সকল জাতির মিলনকেন্দ্র। এটি আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছে।
সহকারী হাইকমিশনার বলেন, আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেককিছু। শিশুদেরকে শুধু পড়ালেখার চাপ দিলে হবে না। শিশুদের মধ্যে মানবিকতা, মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করতে হবে। সত্যিকারের মানুষে পরিণত করতে হবে। কারণ পড়ালেখা করে শিক্ষিত হওয়া যায়, তবে মানুষ হতে হলে মানবিক গুণাবলি প্রয়োজন। শিশুদেরকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখবেন না। তাদেরকে প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে এবং খেলাধুলা করতে সুযোগ দিতে হবে।
ত্বরিকা-ই-মাইজভাণ্ডারীয়ার প্রবর্তক গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক:) এর পবিত্র ১১৪তম উরস উপলক্ষে মাইজভাণ্ডারী একাডেমী এ আয়োজন করে। উরস উদযাপনে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক:) ট্রাস্টের ১০ দিনব্যাপি কর্মসূচি পালন করছে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার এ শিশু-কিশোর সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
এসময় শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক:) ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত সচিব অধ্যাপক এ ওয়াই এম জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো.এহসানে এলাহী, কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট ড. হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি দিদারুল আলম চৌধুরী, কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন, আলোকধারা সম্পাদক ড: সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ, ইঞ্জিনিয়ার কামালুর রহমান,
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন উদযাপন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক এইচ এম রাশেদ খান, অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ তরিকুল আলম, শাহনেওয়াজ চৌধুরী, মুহাম্মদ মঈনউদ্দিন ইমন, এম. মাকসুদুর রহমান হাসনু, বিপ্লব পার্থ, মুহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আশরাফ, এইচ আর মেহবুব জিকু, নুরুল করিম নুরু, আবুল মনসুর, মেজবাহ উদ্দিন, আ ব ম খোরশিদ আলম খান, আশরাফ উদ্দিন সিদ্দিকী, ওমর ফারুক, খোরশেদ আলম, শামসুল ইসলাম, ফজলুল হক ফজু, মুহাম্মদ নাসির, মুহাম্মদ ফারুক, শওকত হোসেন, আহসান উল্লাহ চৌধুরী বিভন, ডা: বরুণ কুমার আচার্য বলাই, মোরশেদুল করিম চৌধুরী, আরেফিন রিয়াদ।
অনুষ্ঠানে কিরাত্ব, হামদ, নাতে রাসূল (দ), মাইজভাণ্ডারী সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, চিত্রাঙ্কন, রচনা ও কুইজে বিজয়ী বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এছাড়া শিশু কিশোর সমাবেশে পাখি, ফায়ার সার্ভিস, খুলশী থানা, বিজ্ঞান মেলা, চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন স্টলে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
জয়নিউজ/পিডি