চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দীন আহমেদের কাছে ৬৯ হাজার ৩১১ ভোটের বড় ব্যবধানে হেরেছেন বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ এটিকে সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন। আবার কেউ বলছেন, সত্যিকারের বাঘে খাওয়ার আগে মনের বাঘে খেয়েছে বিএনপিকে। যদিও বিএনপি দুষছে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে।
বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান পক্ষ থেকে নির্বাচনের দিন (১৩ জানুয়ারি) দুপুরেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে দেন নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
‘নির্বাচনে অনিয়ম প্রসঙ্গে’শিরোনামে লিখিত অভিযোগে সুফিয়ান উল্লেখ করেন, সকাল ১১টায় নির্বাচনি এলাকার প্রতিটি কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয় সরকারদলীয় ও বহিরাগত লোকজন। এরপর তারা ইচ্ছেমতো ইভিএম মেশিনে ভোট দিতে থাকে। এ অবস্থায় নির্বাচন স্থগিত ও পুননির্বাচনের দাবি জানান সুফিয়ান।
তবে রাতে ঘোষিত প্রাপ্ত ফলাফলে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ পান ৮৭ হাজার ২৪৬ ভোট। তাঁর নিকটতম ধানের শীষ প্রতীকে মো. আবু সুফিয়ান পান ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট। এছাড়া আপেল মার্কায় মো. এমদাদুল হক ৫৬৭ ভোট, চেয়ার প্রতীকে সৈয়দ মো. ফরিদ উদ্দিন ৯৯২, কুড়েঘর প্রতীকে বাপন দাশগুপ্ত ৬৫৬ ভোট এবং টেলিভিশন প্রতীকে এসএম আবুল কালাম আজাদ ১ হাজার ১৮৫ ভোট পান।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের মতে, বিএনপি প্রশাসনের কাঁধে দায় চাপিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকেই আড়াল করার চেষ্টা করছে। বিএনপির এজেন্টরা ভয়-ভীতির দোহাই দিয়ে ভোটকেন্দ্রে হাজির না হলেও বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রেই স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।
তাঁরা মনে করছেন বাঘে খাওয়ার আগে মনের বাঘে খেয়েছে বিএনপিকে। ১৩ মাস আগে জাসদ নেতা বাদলের কাছে বিএনপির প্রার্থী সুফিয়ান বিপুল ভোটে পরাজিত হন। আবার উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দীনের কাছে অর্ধলক্ষাধিক বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। একটি আসনে ১৩ মাসের মধ্যে দুইবার বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোট কেন্দ্রে থাকলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। ভোটের দিন দুপুর হতেই সংবাদ সম্মেলন করতে চলে যায়। আসলে বিএনপির মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও মনে করছেন মূলত বিএনপির সাংগঠনিক দূর্বলতা এবং নেতাদের অহেতুক ভীতি। এছাড়া ভোটের আগে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাদের প্রচার-গণসংযোগের নামে ফটোসেশন, ভোটের দিনে কেন্দ্রের আশপাশে নেতাকর্মী না থাকা, রাজনৈতিক কৌশলের দৃঢ়তার অভাব সবকিছু মিলে দলে বিশৃঙ্খল অবস্থা। এছাড়াও ভোটের দিন স্থানীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনে তেমন একটা সক্রিয় ছিলেন না। এজন্য প্রশাসনিক কড়াকড়ি যেমন দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা। সর্বোপরি সরকার ও ক্ষমতাশীন দলের কৌশলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে বিএনপি।
তাই হারার আগেই হেরে যায় বিএনপি বলে মন্তব্য করেছেন নগর বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্র বিএনপি- প্রার্থী সুফিয়ান ছিলেন পরাজিত সৈনিকের মতো। নামে ২০ দলীয় হলেও ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে ছিল না ঐক্যফন্টের কোনো নেতা।
তবে এটিকে সাংগঠনিক দূবলতা মানতে নারাজ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবে রহমান শামীম। তিনি জয়নিউজকে বলেন বিএনপির সাংগঠনিক দূর্বলতা নেই। বিএনপি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। আমরা ধানের শীষের গণজোয়ার সৃষ্ঠি করেছি। শুধু মাত্র নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের দলীয়করণে কারণে আমরা হেরেছি। ভোটের আগের দিন এবং ভোটেরদিন সাধারণ ভোটারদেরকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ভীতি দেখানোর কারণে ভোটারা ভোটকেন্দ্রে আসেনি। ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের। কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
জয়নিউজ/পিডি