খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে অন্তত ৪০ কিলোমিটার দূরের নিভৃত গ্রাম দীঘিনালার বগাপাড়া গ্রাম। সড়ক ছুঁয়ে পাড়াটি গড়ে উঠলেও গভীর অরণ্য পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। বগাপাড়া পেরিয়ে উঁচু পাহাড়ের ঢালে রয়েছে আরো দুটো গ্রাম ছোট হাংড়াখাইয়া ও বড় হাংড়াখাইয়া। তিন গ্রামে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবারের বাস। কিন্তু এই তিন গ্রামের মানুষের যাতায়াতের কোনো সড়ক রাস্তা নেই। আর তিন গ্রামেই মানুষ স্থাপন করেছে অনন্য নজির। এ রাস্তা নির্মাণের জন্য সকাল বিকাল গ্রামের নারী পুরুষ কোজ করছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। রাস্তা নির্মাণের এই কাজে যোগ দিযেছে কিশোররাও। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলছে এ কর্মযজ্ঞ।
এ তিন গ্রামে ইটের সড়ক দূরে থাক পায়ের হাঁটার মতো পথও নেই। পাহাড়ে চূড়া বেয়ে উঠতে হয় আবার নামতে হয়। তবে দীর্ঘ দিনেও সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় গ্রামের মানুষ নিজেরাই নেমে পড়েছেন রাস্তা তৈরিতে।
গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। তাদের জুমের উৎপাদিত বিভিন্ন ফসল কাঁধে করে বাজারে নিতে হয়। একঘন্টা না হাঁটলে রাস্তায় পৌছানো যায় না। অনেক তদবির করেও কোনো লাভ হয়নি। তাই নিজেদের শ্রম ও অর্থ দিয়ে এই সড়কটি তৈরি করা হচ্ছে। গ্রামের সবাই এখানে কাজ করছে। অনেকে ঘর কিংবা জুমের কাজ বাদ দিলেও অনেকে সড়ক নির্মাণের কাজ করছে। জঙ্গলেঘেরা এই পাহাড়ি রাস্তা বানাতে তাদের অন্তত একমাস সময় লাগতে পারে।
গ্রামের গৃহিণী তরুলতা চাকমা জানান,‘দুপুর খাওয়া ছাড়া সারাদিন রাস্তা বানানোর কাজ করছি। আমাদের যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। কেউ এগিয়েও আসেনি। তাই নিজেরা মিলে কাজ করছি। এখন আমরা সহজে যাতায়াত করতে পারব।
বগাপাড়া গ্রামের সভাপতি অলক বিকাশ চাকমা জানান, গ্রামের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। বর্ষা আসলে পাহাড় বেয়ে গ্রামে যাওয়া খুব কঠিন। রাস্তা থাকায় আমরা আশপাশের গ্রাম থেকে পিছিয়ে পড়েছি। বাড়ি নির্মাণ বা ফসল জন্য কোনো সামগ্রী নিতে হয় কাঁধে বহন করে। গ্রামের একমাত্র বিহারটিতেও যাওয়ার কোনো পথও নেই।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কাশেম জানান, উপজেলায় টিআর, কাবিখার বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা রাস্তা নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক সময় বরাদ্দের অভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হয় না। তবে তিন গ্রামের মানুষ যা করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আগামী অর্থবছরে রাস্তার উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে।