বিগত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনের আগে ক্লিন এন্ড গ্রিন সিটি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আ জ নাছির উদ্দীন। নগরপিতা নির্বাচিত হওয়ার পর সেই প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করে চলেছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বদলে যাচ্ছে নগরের নিউমার্কেট গোলচত্বরসহ আশপাশের এলাকা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের নিউমার্কেট মোড়ে শহীদ কামাল উদ্দিন চত্বরে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
চসিক সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে নিউমার্কেট মোড়কে শহীদ কামাল উদ্দিন চত্বর ঘোষাণা দিয়েছেন মেয়র নাছির। সেই চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে স্বাধীনতার স্তম্ভ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের চারটি অধ্যায় থাকছে এ স্তম্ভে। প্রথম স্তরে থাকছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। দ্বিতীয় স্তরে থাকছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬৬’র ছয় দফার দাবি। তৃতীয় স্তরে থাকছে ৬৯’র গণঅভ্যুথান।
সবার উপরে থাকছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশর স্তম্ভ। এই স্তম্ভে বিশেষ মাল্টি কালার লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। রাতে স্তম্ভের কোথাও জ্বলবে লাল বাতি আবার কোথাও সবুজ। স্তম্ভের চারপাশে তৈরি করা হয়েছে পানির ফোয়ারা। স্বচ্ছ জলে ছড়িয়ে পড়বে স্তম্ভের সৌন্দর্য।
স্তম্ভটির উচ্চতা মাটি থেকে ২৭ ফুট। আর প্রস্থ ১০ ফুট। এছাড়া স্তম্ভের চারদিকে রয়েছে বাহারি ফুলের বাগান।
অন্য দিকে আলকরণ জেনারেল পোস্ট অফিসের (জিপিওর) সামনে বসানো হবে চারটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মুর্যাল।
চসিকের এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করছে কে ওয়াই স্টিল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্যস্ততম নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকার ফুটপাত হকারমুক্ত হয়েছে। মুক্ত ফুটপাতে নিউমার্কেট ঘিরে জুবিলি সড়ক, স্টেশন সড়ক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক ও আমতল এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে।
আলকরণ কালী বাড়ি মোড় থেকে আমতল মোড় পর্যন্ত রাস্তার মিডলাইনে লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ। ফুটপাত বাঁধানো হয়েছে টাইলসে। নোংরা পাবলিক টয়লেটকে রূপান্তর করা হয়েছে আধুনিক মোড়কে।
প্রশস্ত করা হয়েছে আশপাশের নালাগুলোও। নোরাং ফুটওভার ব্রিজগুলো সংস্কার করে পথচারী চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে।
নিউমার্কেট থেকে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সড়ক, জিপিও এবং শাহ আমানত শপিং কমপ্লেক্স পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার রাস্তার মিড আইল্যান্ড এবং ফুটপাতেরও সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে।
নগরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা আলকরণ। এলাকার জেনারেল পোস্ট অফিসের (জিপিও) সামনে রাস্তার উপর গড়ে ওঠা ডাস্টবিনের জায়গায় করা হয়েছে ফুলের বাগান। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার ওই অংশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসছিলেন স্থানীয়রা। যে কারণে ওই রাস্তায় চলাচল করাও একরকম কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার উপরে ময়লা ফেলে আসছিলেন স্থানীয়রা। এভাবে ময়লা ফেলতে ফেলতে রাস্তার একপাশ পরিণত হয় ময়লার ভাগাড়ে। এই ময়লা অপসারণ করে ফুলের বাগান করার উদ্যোগ নেওয়ায় তারা খুশি।
আশপাশের বিপণিকেন্দ্রের দোকানিরা জানান, বিকেল থেকেই হকাররা বসছেন। পথচারীরা নির্বিঘ্নে হাঁটতে পারছেন। প্রশাসনের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
এ বিষয়ে নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, আমাদের চট্টগ্রাম সাগর, পাহাড় ও সমতলের সম্মিলনে একটি প্রকৃতিপ্রদত্ত নান্দনিক শহর। এই শহরকে সুন্দর করার জন্য আমরা ‘গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি’ ভিশন নিয়ে কাজ করছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা পুরো নগরকে এলইডি লাইটিংয়ের আওতায় নিয়ে আসছি। এছাড়া নগরের সব গোলচত্বর ও সড়ক বিভাজককে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে।
প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী আদিওস ইস্ক’র স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল আহাদ বলেন, প্রায় ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে এই এলাকার সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছি। প্রকল্পটিতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে শামিমা করপোরেশন।
তিনি আরও বলেন, আলকরণ এলাকার ফুটপাত ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল। দুর্গন্ধের কারণে এলাকাবাসীর যেমন সমস্যা হতো, তেমনি পথচারীসহ হাসপাতাল-ক্লিনিকে আসা রোগীরাও ভোগান্তিতে পড়তেন। এছাড়া এলাকাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় নানা সময়ে ছিনতাইয়ের শিকারও হতেহয়েছে অনেককে। এ প্রকল্পের আওতায় এখানে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান এবং পথচারীদের হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে নির্মিত হয়েছে।
জয়নিউজ/পিডি