প্রায় ১১ বছর পর অবশেষে শ্রীলঙ্কান সরকার স্বীকার করলো, গৃহযুদ্ধের সময় নিখোঁজ হওয়া ২০ হাজার তামিল বিদ্রোহীকে হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানী কলম্বোয় জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে ব্যাপক গুম-খুনের অভিযোগ থাকলেও এবারই প্রথম বিষয়টি স্বীকার করলো লঙ্কান সরকার।
১৯৮৩ সালে শুরু হয়ে টানা ২৬ বছর গৃহযুদ্ধ ছিল শ্রীলঙ্কায়। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত এক লাখ মানুষ। যুদ্ধের শেষ দিকে লঙ্কান সরকারি বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার কঠোর নেতৃত্বেই স্বাধীনতাপ্রত্যাশী হিন্দু ধর্মাবলম্বী তামিল সংখ্যালঘুদের হারায় বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারি বাহিনী।
যুদ্ধে দুই পক্ষের বিরুদ্ধে নৃশংস পদ্ধতি বেছে নেয়ার অভিযোগ থাকলেও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার দাবি, যুদ্ধের সময় সরকারি বাহিনী তামিলদের ওপর ব্যাপক হারে বেআইনি হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। শেষের দিকে দেশটির সরকারি বাহিনীর আচরণ ইতিহাসেরই অন্যতম বর্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বলে মনে করা হয়।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা ফুটেজে সরকারি বাহিনীর সদস্যদের চোখবাঁধা বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করতে দেখা যায়। সে সময় ‘নো ফায়ার জোন’-এ একের পর এক সশস্ত্র হামলায় অন্তত ৭০ হাজার তামিল বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া যুদ্ধের পরও ধারাবাহিকভাবে তামিল সমাজকর্মী ও সাংবাদিক নিখোঁজ হচ্ছেন বলে দাবি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের।
এত সব অভিযোগ থাকলেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিতে নারাজ প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, যুদ্ধ চলাকালীন যেসব সরকারি কর্মী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন; তাদের দায়মুক্তি দিতে শিগগিরই নতুন আইনের ঘোষণা দেবেন প্রেসিডেন্ট। লঙ্কান এই প্রেসিডেন্টের দাবি, সেনাদের সাজা দিলে যুদ্ধ পরবর্তী শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ব্যাঘাত ঘটতে পরে।
জয়নিউজ/পিডি