আবারও ঘোলা হয়ে গেছে বগা লেকের পানি!

বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাহাড়ের চূড়ায় রহস্যময় বগা লেকের পানি হঠাৎ ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। কয়েকদিন ধরে ঘোলা হওয়া প্রাকৃতিক এ লেকের পানি মঙ্গলবারও পরিষ্কার হয়নি। শুধু ঘোলাটে নয়, রহস্যময় এই লেকের পানি থেকে এক ধরনের গন্ধ বের হচ্ছে।

- Advertisement -

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানায়, গত শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে অন্যতম পর্যটন স্পট পাহাড়ের চূড়ায় স্বচ্ছ পানির বৃহত্তর প্রাকৃতিক লেক ‘বগা লেক’র পানি হঠাৎ ঘোলাটে হওয়া শুরু করে। কয়েকদিনের ব্যবধানে লেকের সম্পূর্ণ পানি কাদামাখা ঘোলাটে হয়ে গেছে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে বগা লেকের পানি স্বচ্ছ এবং নীল রঙের।  তবে এখন লেকের পানি চেহারা মাটির রঙের মতো হয়ে গেছে। ঘোলা পানি থেকে এক ধরণের গন্ধও বের হচ্ছে। প্রাকৃতিক এই লেকের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন গোসলও করতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে পানি ঘোলাটে হওয়ার কারণ বলতে পারছে না কেউই।

- Advertisement -google news follower

রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ালদো বম ও বম ধর্মীয় নেতা রেভারেন্ট জারলম বম জানান, পাহাড়ের চূড়ায় প্রাকৃতিক এই লেকের উৎপত্তি সম্পর্কে বহু কথা প্রচলিত আছে। নামকরণ নিয়েও রয়েছে নানা গল্প। তবে রহস্যময় বগা লেকের পানি ঘোলা হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। চার বছরের মধ্যে অন্তত একবার এই লেকের পানি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। সপ্তাহ দশদিন ঘোলা থাকার পর পুনরায় পানি পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু কেন পানি ঘোলাটে এবং দুর্গন্ধ হয় সেটি বলা মুশকিল। হয়ত এর পেছনে কোনো রহস্য লুকানো আছে।

এদিকে প্রাকৃতিকভাবে বগা লেক সৃষ্টি নিয়ে রুমা উপজেলার স্থানীয় বম, মারমা, ম্রো, খুমি ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীদের পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। কারো মতে, বগা লেক ছিল একটি সমৃদ্ধ ম্রো সম্প্রদায়ের গ্রাম। গ্রামের পাশে সুড়ঙ্গে একটি বিশাল সাপ থাকত। গ্রামবাসীরা একদিন সাপটি ধরে খেয়ে ফেলে। ওই সাপ খেয়ে ফেলায় নাগরাজার প্রতিশোধের কারণে গ্রামবাসীসহ গ্রামটি দেবে গিয়ে বগা লেকের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো অনেক বম-ম্রো বিশ্বাস, লেকের গভীরে থাকা নাগরাজ লেজ নাড়ালে পানি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

- Advertisement -islamibank

বগালেকের জন্ম ইতিহাস নিয়ে স্থানীয় পাহাড়িদের মাঝে মজার আরও একটি গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটি হচ্ছে, অনেকদিন আগে একটি চোঙ্গা আকৃতির পাহাড় ছিল। দুর্গম পাহাড়ে ঘন অরণ্য। পাহাড়ের কোলে বাস করত পাহাড়িদের দল- ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা ও মারমা। পাহাড়ি গ্রাম থেকে প্রায়ই গবাদিপশু আর ছোট বাচ্চারা চোঙ্গা আকৃতির পাহাড়ের মধ্যে হারিয়ে যেত। গ্রামের সাহসী লোকেরা কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখে পাহাড়ের চূড়ার গর্তে ভয়ঙ্কর এক ‘বগা’ বাস করে। স্থানীয় বম ভাষায় বগা মানে ড্রাগন। স্থানীয় ক’জন পাহাড়ি মিলে আক্রমণ করে ড্রাগনটি মেরে ফেলে। এতে ড্রাগনের গুহা থেকে ভয়ঙ্কর গর্জনের সঙ্গে আগুন বেরিয়ে আসে। নিমিষেই পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম পাহাড়ি লেকের জন্ম হয়।

তবে এখানে ভ্রমণকারী ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, বগাকাইন হ্রদ (বগা লেক) মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ড পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।

আবার অনেকের ধারণা, ভূমিধসের কারণেও এটি সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। বগালেকটি বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

এ ব্যাপারে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামসুল আলম জয়নিউজকে বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পর্যটন স্পট বগা লেকের পানি কেন নির্দিষ্ট একটি সময়ে ঘোলাটে হয় সেটি বলা খুবই মুশকিল। পানির গভীরে কোনো আলোড়ন সৃষ্টির কারণে অথবা কোনো জলজ উদ্ভিদ নির্দিষ্ট সময়ে মরে পঁচে গেলে পানি ঘোলা হয়ে থাকতে পারে।

জয়নিউজ/পিডি
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM