রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০০৯ সালে আবদুচ ছালামকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। চট্টগ্রামের ওয়েল গ্রুপের কর্ণধার ছালাম নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর গত বছরের এপ্রিলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদ থেকে বিদায় নেন তিনি। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় জহিরুল আলম দোভাষকে। যদিও আবদুচ ছালাম পুনরায় চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য কম তদবির করেননি।
সিডিএ চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে তিনি দলীয় মনোনয়ন চান। সিডিএ চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও মনোনয়ন চান। তবে তিনবারই তিনি ব্যর্থ হন।
আরো পড়ুন: আইন মানেনি ছালাম, জরিমানা গুনল সিডিএ
সংসদ নির্বাচনে তিন দফা স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার মাঝেই ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রীর সামনে মেয়র পদে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেন আবদুচ ছালাম। কিন্তু ওই সময় দলের মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনেও দল থেকে মনোনয়ন চান ছালাম। এজন্য চালিয়ে যান লবিং। ‘সংসদ সদস্য পদে চাই’ শিরোনামে ছালামের পোস্টার, ফেস্টুন আর ব্যানানে সয়লাব হয়ে যায় চান্দগাঁও-বোয়ালখালী এলাকা। কিন্তু এবারও শিকে ছিড়ল না।
এতকিছুর পরও ‘মনোনয়ন স্বপ্ন’ দেখা ছাড়ছেন না ছালাম। ফের তিনি স্বপ্ন বুনছেন চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে। স্বপ্নপূরণে ইতোমধ্যে নগরের বিভিন্ন জায়গায় সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। সেই পোস্টারে লেখা আছে, ‘কর্মবীর আবদুচ ছালাম ভাইকে মেয়র পদে দেখতে চাই’।
আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কাছে শো অফ করতেই স্ট্যান্ডবাজি ছালামের!
এদিকে বেশ কয়েকবার সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশার পর মেয়র প্রার্থী হতে ছালামের স্বপ্নকে ভালোভাবে দেখছেন না অনেকেই। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তারা বলছে, একজন মানুষ কিভাবে সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান? উনার তৃপ্তি নেই, নাকি আওয়ামী লীগে আর ত্যাগী মানুষ নেই- প্রশ্ন করেন তারা।
এদিকে নির্বাচন করতে চান ছালামের ভাই সৈয়দ নজরুল ইসলামও। না, মেয়র নয়; তিনি মোহরা ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চান।
এর আগে একদশক সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে ছালামের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে উল্লেখ করে তাঁকে বহিষ্কারের দাবি উঠে মহিউদ্দিন চৌধুরী-দানু কমিটিতে। প্রয়াত চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে ছালামের সমালোচনা করেন।
আরো পড়ুন: ছালামের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
ছালামের দায়িত্ব শেষে তাঁর বিরুদ্ধে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম, কাজীর দেউড়ি বাজারের সাবস্টেশন বদলে ওয়েলফুডের শো-রুম করা, ১০ কোটি টাকার প্লট পাঁচ অনুচরের হাতে দেওয়া, অনুগতদের পদোন্নতি, উদ্বোধনের আগেই আউটার রিং রোডে ধস, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে গাফিলতি, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম, আবাসিক এলাকায় নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অজস্র অভিযোগ উঠে।
এদিকে একাধিকবার এমপি এবং এবার মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আবদুচ ছালাম জয়নিউজকে বলেন, ‘এটাতো দোষের কিছু নয়।’ এই বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।