বাঁশখালীর কোকদণ্ডী ঋষিধামে ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা সম্পন্ন হয়েছে।
মেলায় এসেছিলেন দেশ-বিদেশের দুই হাজার সাধু-সন্ন্যাসী। প্রায় ২০ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের জন্য ঋষিধামের নিজস্ব ৪৪ একর জায়গা ছাড়াও আশপাশের ৮০ একর এলাকাজুড়ে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ জানুয়ারি র্যাীলি ও শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) চণ্ডীযজ্ঞ ও অন্নকুটের মাধ্যমে মেলা শেষ হয়।
এবারের মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্বামীজির দৃষ্টিনন্দন মূল মন্দিরে শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজের আবক্ষ মূর্তিতে প্রাণ সঞ্চারণ পূজা।
এদিকে সবকিছু সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও মেলা কমিটির সদস্যদের উদ্যেগে ২৬টি উপ-কমিটি করা হয়। এ কমিটির মাধ্যমে ১ হাজার ৭শ’ জন কর্মীবাহিনী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া ছিলেন ৩ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঋষিধামের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্যান্ডেল স্থাপন, সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জায় ছিল ভরপুর। দেশ-বিদেশের সাধু-সন্নাসী ও ভক্তদের জন্য টাঙানো হয়েছিল তিন হাজার অস্থায়ী ত্রিপল।
কুম্ভমেলায় যশোর, দিনাজপুর, ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা স্টল নিয়ে এসেছেন। ছিল কুটিরশিল্প, কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, খেলনা, পুতুল, প্রসাধনী, পোশাক ও খাবারের দোকান।
ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার আহ্বায়ক ও রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিত জয়নিউজকে বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও ভক্তদের সুশৃঙ্খল সহযোগিতায় ২০ লাখ পুণ্যার্থীর মিলনমেলা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছিল।
ঋষিধামের মোহন্ত মহারাজ সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজের উদ্ধৃতি দিয়ে ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট অনুপম বিশ্বাস জয়নিউজকে বলেন, ‘মেলাকে প্রাণবন্ত করতে ঋষিধাম প্রাঙ্গণে সম্পূর্ণ ধর্মীয় আবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। লাখ লাখ ভক্তদের নিয়ন্ত্রণে সর্বমহলের সহযোগিতা ছিল তুলনাবিহীন।’
ঋষিধামের পরিচালনা কমিটি ও শ্রীগুরু সংঘের সভাপতি লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ জয়নিউজকে বলেন, ‘কুম্ভমেলা স্বাভাবিকভাবে ভারতের চারটি জায়গায় হয়। কিন্তু এ দেশের সকল মানুষের পক্ষে ভারতে গিয়ে পুণ্য অর্জন করা সম্ভব না হওয়ায় ভক্তদের সুবিধার্থে ভারতের সন্ন্যাসীদের আনার ব্যবস্থা করে বাঁশখালীতে মেলার প্রচলন করেন স্বামীজি অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ। মেলায় সমগ্র বিশ্বের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করা হয়। স্বামীজির পূজা-অর্চনা করা হয়। ১০ দিনব্যাপী এই মেলায় ২০ লক্ষাধিক নর-নারীর সমাগম ঘটেছে। সকল অনুষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে শেষ হয়েছে।’
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম মজুমদার জয়নিউজকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় মনিটরিং করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টায় ছিল। ফলে ১০ দিনে এ কুম্ভমেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জয়নিউজকে বলেন, ‘এ কুম্ভ মেলা বাংলাদেশের বৃহত্তর ধর্মীয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সার্বিক মঙ্গলার্থে সার্বিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।’
ঋষিকুম্ভে আত্মশুদ্ধি: সাধুদের দর্শন মানেই পুণ্য। স্থাবর ও জঙ্গম মিলিয়ে তীর্থ দুই প্রকার। গয়া, কাশী, বৃন্দাবন ইত্যাদি স্থাবর ও সাধু-মহাত্মারা হলেন জঙ্গম। তীর্থভ্রমণ, তীর্থদর্শন যেমন পুণ্যফলদায়ক একইভাবে সাধু দর্শন, সাধু সংস্পর্শ মাত্রই পুণ্যসঞ্চার অবশ্যম্ভাবী। তীর্থকেও পবিত্র করে তোলেন সাধুরা। সাধুদের অবস্থান যেখানে, সাধুদের সিদ্ধ-সাধন-পীঠস্থান হচ্ছে তীর্থস্বরূপ। অদ্বৈতানন্দের বাণীতে বলা হয়েছে- ‘গঙ্গা জলসম কৃষ্ণ কথা অতীব পাবনী’। নাম শ্রবণে কীর্তনে গঙ্গাস্নানের সম ফল লাভ শাস্ত্রসম্মত।
এ লক্ষ্যে ঋষিকুম্ভের কলিহত জীবের পাপমুক্তির জন্য নাম-সংকীর্তন যজ্ঞের ব্যবস্থা রেখে গিয়েছিলেন অদ্বৈতানন্দ। ভারতবর্ষের মহাকুম্ভমেলায় গিয়ে পুণ্যার্থীরা যতটুকু কৃতার্থ হয় ঋষিকুম্ভ মেলায় গিয়ে অবস্থান ও নাম শ্রবণে তার সমান কৃতার্থ হয়।