চট্টগ্রামের রাজনীতিতে পল্টিবাজ খ্যাত সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর মনজু মেয়র হতে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপিতে। বিএনপি থেকে মেয়র হয়ে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হয়েছিলেন। আবার সেই দলকেও ‘গুডবাই’ বলে বিদায় জানান তিনি।
এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরেকবার মেয়র প্রার্থী হতে চান এম মনজুর আলম। তবে আওয়ামী লীগ না বিএনপি থেকে করবেন সেই বিষয়ে তর্ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন সেই মনজু। এতে চরম ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত হয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
তারা বলছেন, মনজুর আলম একজন ক্ষমতাপ্রিয় মানুষ। ক্ষমতার জন্য তিনি কয়েকবার দল পাল্টিয়েছেন। এ ধরণের মানুষ রাজনীতির জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব মানুষকে বর্জন করা উচিত সব রাজনৈতিক দলকে।
কাউন্সিলর থেকে মেয়র, পল্টি রাজনীতির পুরনো মুখ
১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৬ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন মনজুর আলম। সেই সময় মনজুর ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
পরে ২০১০ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করেন মনজু। প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে মনজুরের কাছে হেরে যান তৎকালীন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
আরও পড়ুন: মনজুকে বিশ্বাস করে না আ’লীগ-বিএনপি!
নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন মনজু। পেয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ।
২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি আবার বিএনপির সমর্থনে মেয়র প্রার্থী হন। তবে নির্বাচনের দিন সকালে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মনজুর আলম। যদিও এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়।
আবার ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের কাট্টলী এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মনজুর আলম। এরপরই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গণে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে মনজুরকে আওয়ামী লীগে ফেরাতে আগ্রহী মহিউদ্দিন।
কারণ মেয়র থাকাকালে মনজুরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও তাতে কখনো যোগ দেননি মহিউদ্দিন। আর ‘গুরু’ মহিউদ্দিন প্রসঙ্গে মনজুরের কণ্ঠও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় আপ্লুত শোনা গেছে সবসময়।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ফের সক্রিয় হয়েছিলেন মনজু। চট্টগ্রাম-৪ ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী হতে ধানমণ্ডি গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও নিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এক বছর আগে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, মনজুরকে বিশ্বাস করা কঠিন।
মনজুর সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়ে তখন হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, মনজুকে বিশ্বাস করা আসলেই খুব কঠিন। তিনি (মনজু) কোন দল করেন নিজেও জানেন না। তিনি কখনো আওয়ামী লীগ, আবার কখনো বিএনপির। এভাবেই তিনি (মনজু) রাজনীতি করে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আবার ক’দিন পরেই হয়তো দেখা যাবে তিনি বিএনপিতে চলে যাচ্ছেন।
নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন জয়নিউজকে বলেন, ‘মনজুর ব্যাপারে মন্তব্য না করাই উচিত। নৈতিকতা সবার মধ্যে থাকা চাই।’