একসময় চট্টগ্রাম শহরকে বিলবোর্ডের নগর বলা হতো। নানারকম বিলবোর্ডে ঢেকে ছিল পুরো শহর। আর বিলবোর্ডের কারণেই দেখা যেতো না প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে বিলবোর্ড ব্যবসার শুরু বলে জানান অনেকেই।
পরবর্তীতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র মনজুর আলমের আমলেও তা লাগামহীনভাবে চলতে থাকে। বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন বলে জানা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিলবোর্ডের মালিক ছিলেন নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু।
এছাড়া যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন বাবর, এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ওয়াসিম, জিএস আরশেদুল আলম বাচ্চু, যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ, আজিজুর রহমান আজিজসহ বেশ কয়েকজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এ ব্যবসা।
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি চট্টগ্রামের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেন। মাত্র এক মাসের মধ্যে প্রায় চার হাজার বিলবোর্ড, ইউনিপোল ও মেগাসাইন অপসারণ করেন মেয়র নাছির।
এরপর থেকে সিটি করপোরেশনের সীমার মধ্যে আর কোনো বিলবোর্ড স্থাপিত হয়নি। যা মেয়র নাছিরের সফলতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। পরে মেয়র নাছিরকে অনুসরণ করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রও ঢাকা শহরের বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে।
ইতোমধ্যে চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। নির্বাচনের লক্ষ্যে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়র পদে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
একসময় বাকশালের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রেজাউল করিমকে ইতোমধ্যে স্বাগত জানিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ। তবে মনোনয়ন পাওয়ার পর তাকে ঘিরে রেখেছে সেই বিলবোর্ড ব্যবসায়ীরা।
ঢাকার একটি হোটেলে রাতে বিজয় উদযাপনও করেছেন তারা। যার কিছু ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে মহিউদ্দিন বাচ্চু, ওয়াসিম, আরশেদুল আলম বাচ্চুরা ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিমকে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিলবোর্ড উচ্ছেদ ছিল মেয়র নাছিরের প্রথম সফলতা। কিন্তু মেয়র নাছির মনোনয়ন না পাওয়ার পর রেজাউল করিমের পাশে আবার বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের আনাগোনা রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আশপাশে বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মনে হচ্ছে, নগরে আবার বিলবোর্ড ব্যবসা শুরু হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে শুরুতেই যদি কারো দ্বারা প্রভাবিত হয় তবে ভবিষ্যতে এর মাশুল দিতে হতে পারে মেয়র প্রার্থীকে। সেক্ষেত্রে নির্বাচিত হলে তাদের দ্বারায় আবদ্ধ থাকবেন মেয়র। এছাড়াও তাদের নানা অবৈধ আবদার রাখতে গিয়ে দুর্নাম হতে পারে তার।