দেশে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বাংলা উচ্চারণের দৈন্য দশা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলা ঠিক নয়। বিশ্বায়নের এই যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য অন্য ভাষার শেখার প্রয়োজন আছে। তবে সেটা মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে নয়।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এক আলোচনা সভা হয়। এতে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে পারার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব ও সৌন্দর্য নিয়েও কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাষাবিদ পবিত্র সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনকার সময়ের অনেক ছেলেমেয়েকে দেখা যায় ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলার চেষ্টা করে। বাংলা বলতে তাদের কেমন যেন কষ্ট হয়। অথচ তারা এই দেশের আলো বাতাসে, এই দেশের মাটিতেই বড় হয়েছে।
‘যারা বাংলাদেশের মাটিতে বড় হয়ে বাংলা বলতে পারে না, ইংরেজি উচ্চারণে কথা বলে, তাদের জন্য করুণা করা ছাড়া কিছুই বলার নেই।
আমার বরং নিজের দেশের, নিজের গ্রামের কথা বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য। বক্তৃতায় আমরা গোপালগঞ্জের ভাষা আর ঢাকার ভাষা মিলিয়েই বলি। কারণ ছোটবেলায় চলে এসেছি ঢাকা শহরে, সেই ভাষার প্রভাব। আর টুঙ্গীপাড়ার মাটিতে জন্ম নিয়েছি সেটা একটা প্রভাব, সব মিলিয়েই বলি। এর মাঝে কোনো লজ্জা নেই।’
একুশে ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ার পর ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ দিকে এই ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও পরে সরকার পরিবর্তনে কাজ থমকে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে ইনস্টিটিউটের অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হয়।
সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল (বিএনপি) তারা এই ইনস্টিটিউটের কাজে আর গুরুত্ব দেয়নি। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আমি আবার শুরু করেছি। আমার জন্য এমন একটি কাজ রেখে দেওয়ার জন্য বিএনপি নেত্রীকে ধন্যবাদ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলসহ অতিথিরা বক্তব্য দেন।