অন্ধকারচ্ছন, আর্বজনাময়, জননিরাপত্তাহীন একটি ওয়ার্ড শুধু মধ্যবিত্ত-ধনিকশ্রেণীর বসবাসের জন্য হয়ে উঠেছিল ‘হেলদি ওয়ার্ড’! যার নামে ছিল ঝনঝনানি, কামে ছিল লবডঙ্কা।
জামালখান ওয়ার্ডের এই অপবাদ দূর করা ছিল তাঁর প্রতিজ্ঞা। সেই প্রতিজ্ঞাকে পাথেয় করে, শতফুল ফোটানোর শপথে নেমেছিলেন নির্বাচনী বৈতরণীতে। ভোটের নির্বাচনে জিতে প্রতিনিয়ত জিতিয়ে চলেছেন এলাকাবাসীকে। ‘তারুণ্যের বার্তাবাহক’, ‘সৌন্দর্যের পূজারি’, ‘পরিবর্তনের ঝান্ডাধারী’ অনেক নামেই ডাকা হয় তাঁকে। তিনি আর কেউ নন, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।
জয়নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ, কর্ম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
কথা বলছে দেয়াল : প্রথমে আমি জামালখানের স্কুলগুলোর দেয়াল চিহ্নত করে কিছু কাজ করেছিলাম। এজি চার্জ, খাস্তগীর, সেন্ট মেরিস, কুসুম কুমারী স্কুলের দেয়ালে তুলে ধরা হয়েছে মণিষীদের উক্তি। আমরা বিভিন্ন ধরনের অঙ্কন করেছিলাম। কিন্তু দেখা গেল সেটিও টিকছে না। তখন আমরা পোড়া মাটি এবং টাইলস দিয়ে বিভিন্ন ফলক দিয়েছি। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে পোস্টার লাগানো বন্ধ হয়েছে। একইসঙ্গে স্কুল শিক্ষার্থীরা আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছে। যারা আমাদের বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামকে সমৃদ্ধ করেছে তাঁদের সম্পর্কে জানতে পারছে।
বাংলাদেশ দেখবে জামালখান : মূলত এ স্লোগানকে ধারণ করেই কাজ করছি। অনেকে মনে করেছিলেন এটি শুধুই একটি স্লোগান। কিন্তু এই স্লোগানটি দিন দিন দৃশ্যমান হচ্ছে। যে গতিতে চলছে আগামী দু’বছরের মধ্যে জামালখান একটি অন্যতম ওয়ার্ড হবে। জামালখান ওয়ার্ডের কথা চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পরবে।
জামালখানের যে মোড়টি আছে এটি অনেক ব্যাপক এবং বিস্তৃত। সবমিলিয়ে দেখলাম ওই জায়গাটাকে খব সুন্দরভাবে উপস্থাপ করা যায়।
চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের বারাদ্দকৃত প্রথম যাত্রী ছাউনি হয় জামালখানে। এজি চার্জ স্কুল থেকে পিডিবি পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ফুট ফুটপাতজুড়ে রয়েছে বাগান ও বসার জায়গা। ফুটপাতে বসানো হয়েছে টাইলস। সবমিলিয়ে ২৪ জন বসার জায়গা রয়েছে। রয়েছে দুটি টয়লেটও। এর মধ্যে একটি শুধু নারীদের জন্য। কুলিং কর্ণার ও পাঠাগার করেছি।
সরকার ও চসিকের উন্নয়নের অংশীদার জামালখান : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং সরকারের প্রকল্প এবং উন্নয়নমূলক কর্মকা-গুলো দেখানোর জন্য পোস্টার বা ব্যানারের পরিবর্তে এলইডি স্থাপন করি। সরকার এবং চসিকের উন্নয়ন এখানে সম্প্রচার করা হবে। যদি এ ধরনের টিভি বাসানো যায় তাহলে বড় ধরনের রাজস্ব পাবে চসিক। যেটি বিগত সময়ে কল্পনাও করা যেত না।
কার্যকর ফুটপাত নিয়ে ভাবনা : কাজের ক্ষেত্রে প্রথম যে বিষয়টা আমি চিন্তা করি সেটি হলো ফুটপাত। আমাদের দেশের অনেক মানুষ ফুটপাত ব্যবহার করতে জানে না। ফুটপাত থাকার পরও অনেকে বেশিরভাগ সময় সড়কে হাঁটে। তাই চিন্তা করলাম ফুটপাতগুলোকে ছোট করার। কারণ আমাদের দেশে অনেক ফুটপাতই দখল করে রাখে ভ্যান গাড়ি, ভাসমান দোকান। কিন্তু যখন আমি ফুটপাতের পাশ ধরে বাগান করি তখন ভাসমান দোকানগুলো উঠে গেছে। একইসঙ্গে জনগণও ঠিকমতো ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছে। ফুটপাতগুলো আরো সুন্দর করার জন্য করা হচ্ছে পেপ টাইলস।
আলোকরা জামালখান : পরিত্যক্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলোয় করেছি পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। কারণ অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ওই জায়গাগুলোতে বিভিন্ন অসামাজিক কাজ চলত। তাই আমি ওই জায়গাগুলো আলোকিত করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আগে ছিল ৩২টি ডাস্টবিন। বর্তমানে জামালখানে একটিও ডাস্টবিন নেই। সব ডাস্টবিনগুলো ভেঙে ফুলের বাগান করা হয়েছে। এটি দিয়ে আমরা প্রমাণ করলাম, চাইলে ডাস্টবিনেও ফুল ফুটানো যায়।
অপরাধ দমনে সিসি ক্যামেরা : আমি জামালখানে এসে ৩২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। সিসি ক্যামেরার মধ্যামে আমারা অনেক অপরাধী সনাক্ত করতে পেরেছি এবং অনেক অপরাধ কর্মকা- থেকে মুক্তি পেয়েছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে শতাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম ডিজিটাল স্কুল হলো কুসুম কুমারী স্কুল। সেখানে ব্যবস্থা করা হয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্টের। যেখানে আভিবাভকরা খুব সহজে জেনে যাবে তাদের সন্তান স্কুলে উপস্থিত আছে কি-না। খুব সহজে পেয়ে যাবে তাদের সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল। জামালখানের ৮টি জায়গাই ব্যবস্থা করা হয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই। যেখানে সবাই বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবে ইন্টারনেট।
মিস্টার বাংলাদেশ : ১৯৯০ সাল থেকে মাদকবিরোধী আন্দোলন শুরু করি। এ হিসাবে প্রায় ২৮ বছর ধরে এ আন্দোলনের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত। ১৯৯৪ থেকে ২০০২ পর্যন্ত মোট ৬ বার আমি ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ হয়েছিলাম। আমার তিনটি ব্যায়ামাগার রয়েছে। আমি মনে করি আমাদের দেশকে সুন্দর করতে হলে আমাদের দেশের মানুষগুলোকে সুন্দর করতে হবে। মানুষের মন সুন্দর করতে হলে মানুষকে সুস্থ থাকতে হবে। সুস্থ থাকার লক্ষ্যে আমার এই কাজ। মাদক আমাদের দেশে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এই মাদক থেকে রক্ষা করতে যুবসমাজের প্রায়োজন ব্যায়াম এবং খেলাধুলা।