-সাংবাদিক রইসুল হক বাহার, চট্টগ্রামে সবার প্রিয় বাহার ভাই। যার আকষ্মিক মৃত্যু সবাইকে করেছে হতবাক। গতকাল (১৮ই সেপ্টেম্বর) রাত থেকে ফেসবুকের নীলসাদা দেওয়াল হয়ে উঠেছে শোক আর বিলাপের ভূমি।
রাত বারোটা বেজে চার মিনিটে মাছরাঙা টিভি’র ব্যুরো চিফ তাজুল ইসলাম ফেসবুকে জানান দেন এই শোক সংবাদ। তিনি একবাক্যে লিখেন- ‘খুব মিস করবো বাহার ভাই।…শ্রদ্ধা।’ সাথে সাথে মন্তব্যের ঘরে প্রশ্ন উঠে- কোন বাহার ভাই, কি হয়েছে, কিভাবে? তাজুল ইসলাম সম্ভবত নিজেই হতভম্ব। ধীর আলাপে মন্তব্যের ঘরে তিনি লিখেন- ‘মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক রইসুল হক বাহার আর নেই।’ বজ্রাঘাতের মতো এই দুঃসংবাদ ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এরপর ধীরে ধীরে সারারাত আর সকাল থেকে চলে স্মৃতি হাতড়ে প্রিয় বাহার ভাইকে নিয়ে চট্টগ্রামের মিডিয়াপাড়ার শোকগাঁথা।
সিইউজের পক্ষ থেকে মাঝ রাতেই তাৎক্ষণিক শোক জানান সমকালের সাংবাদিক ও সিইউজের নেতা আহমেদ কুতুব।
দেশ টিভির ব্যুরো চিফ আলমগীর সবুজ লিখেন- ‘মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাহার ভাই, রইসুল হক বাহার হঠাৎ চলে গেলেন… মনে পড়ে, পূর্বকোণে যোগ দেওয়ার পর আমার প্রথম নিউজটা পড়েছিল বাহার ভাইয়ের হাতে, এটা আমার বড় স্মৃতি। ভাল থাকুন বাহার ভাই।’
সিইউজে’র সেক্রেটারি হাসান ফেরদৌস লিখেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক সিইউজের সদস্য, রইসুল হক বাহারের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত’।
এজাজ মাহমুদ লিখেন, `আজ তাঁর চলে যাওয়ার খবরটা শুনতেই বুক মুচড়ে উঠল। মনে পড়ে গেল সেই স্মৃতি। সেই কষ্টের কথা। আজ বলতে দ্বিধা নেই সেদিন আমার অবহেলাও কিছুটা ছিল। টুর অপারেটরের মাধ্যমে কাওয়াই যাবার ব্যবস্থা করে দেওয়া যেত। এজন্য এখন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করুন প্রিয় বাহার ভাই’।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ লিখেন, ব্যক্তি জীবনে আপাদমস্তক সৎ এ মানুষটি সময়জ্ঞান ও নিয়ম রক্ষার ক্ষেত্রেও ছিলেন উদাহরণযোগ্য। চাকরি করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে। বন্দরের সামান্য পিয়নও কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও চিফ একাউন্টেন্ট হিসেবে তিনি বাড়তি এক টাকায়ও হাত দেননি’।
বিএফইউজে’র সহ–সভাপতি রিয়াজ হায়দার লিখেন, `দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষের হিসাব শাখার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা । গণমাধ্যমে কাজ করেন দীর্ঘদিন। ডেইলী স্টারের চট্টগ্রাম ব্যুরোচীফ, সুপ্রভাত বাংলাদেশের বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক পুর্বকোণের সিনিয়র সাব এডিটর হয়ে সর্বশেষ সহযোগি সম্পাদক ছিলেন । গত ২০১৬ ইংরেজী সালের ৩ডিসেম্বর স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল NEWS24- লাইভে তাঁর মুখোমুখি বসেছিলাম । দিনের সংবাদ বিশ্লেষনের পাশাপাশি জানালেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার কথা । স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ও গবেষক রইসুল হক বাহার’।
বিএফইউজে’র যুগ্ন সম্পাদক মহসিন কাজী লিখেছেন, `একজন শুদ্ধ মানুষ ও এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারালো জাতি। বিনম্র শ্রদ্ধা রইসুল হক বাহারের প্রতি। কর্ম আর সততায় অমর থাকবেন সবার হৃদয়ে’।
প্রয়াত রইসুল হক বাহারের সাবেক সহকর্মী ডেইলি স্টারের সাংবাদিক এফএম মিজানুর রহমান শিপন লিখেন, `বাহার ভাই একজন বিনয়ী মানুষ ছিলেন। তার বিনয়ীভাব আমার মতত যে কাউকে বিস্মিত করবেন। এই প্রচণ্ড মেধাবী ও সাহসী সৎ মানুষটির সাথে তিনি ডেইলি স্টার এ থাকতেই পরিচয়। এ জাতির এ প্রজন্ম আর লিজেন্ড থেকে ইতিহাস শুনবে না। বিনয়ীর ছায়া পাবে না। সৎ কি কিভাবে থাকতে হয় তা জানবে না’।
অনুবীক্ষণ–এর সম্পাদক ও প্রকাশক ডা. মাহফুজুর রহমান লিখেন, `মুক্তিযুদ্ধের সময়েই তার সাথে আমার পরিচয়। সে বিএলএফ কেসি ৪ এর সদস্য হলেও কাজ করতো আমার সাথেই। যখনই যেঅপারেশনে পাঠিয়েছি সফলতার সাথে তার সাথীদের নিয়ে সে তা করে আসতো।তথন থেকেই সে আমার খুব স্নেহের পাত্রে পরিণত হয়। এক সময়ে মনে হতে থাকে বাহার আমার একজন ছেলে। যুদ্ধকালীন একজন কমান্ডার তার সাথীদের হয়তো নিজের ছেলের মতোই দেখেন। বাহারের মৃত্যু আমাদের অনেকের কাছে সহনীয় বিষয় নয়, আমার কাছেতো নয়ই। গবেষণা কেন্দ্রে আমরা যারা আছি তাদের প্রায় সবারই বয়স ৭০ বা তার কাছাকাছি। বাহারের বয়স তুলনামুলকভাবে কম। আমাদের অনেকের আশা ছিল বাহার গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্ব নেবে।দেশের জন্য আরো অনেকদিন তার অবদান রাখবে। কিন্তু আমার,আমাদের অনেকের আগেই বাহার চলে গেল। এ যেন বাবার কাধে সন্তানের ভারী লাশ।বাহার বেচে থাক আমাদের মাঝে এই কামনা করছি’।