বাংলাদেশের উপর এনআরসি-সিএএর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। তার বাংলাদেশ সফর শেষে বিস্তারিত বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় দূতাবাস।
বুধবার (৪ মার্চ) দূতাবাসের বিবৃতিতে সফরের বিভিন্ন বিষয়সহ সাম্প্রতিক বিষয় তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, শুধু আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি হালনাগাদকরণ প্রক্রিয়া চলছে। প্রকৃতপক্ষে এই প্রক্রিয়াটি ভারতের সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনায় এবং তত্ত্বাবধানে হয়েছে। নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেও যারা অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন বলে মনে করেন তাদের জন্য মামলা করার এবং নাগরিকপঞ্জিতে অন্তর্ভুক্তি পেতে অনেকগুলি বিচারিক প্রতিকার রয়েছে। বাংলাদেশের উপর কোনও প্রভাব পড়বে বলে এই মুহূর্তে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।
‘ভারতের নাগরিকদের বা কোনও জাতি বা ধর্মীয় পরিচয়ের বিদেশী নাগরিক, যারা প্রাকৃতিকীকরণ বা অন্য কোনও পথে ভারতে নাগরিকত্ব পেতে ইচ্ছুক তাদেরে উপর এই বিলের কোনও প্রভাব নেই। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, ‘কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া নয় বরং দেওয়াই এই বিলের উদ্দেশ্য।’
এটি কেবল পূর্বানুক্রমিক প্রভাবসহ একটি পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য আমাদের উপমহাদেশের বহুসংখ্যক ব্যক্তিকে নিয়মিত করা, যারা কয়েক দশক ধরে সরকারি কোনও সুবিধা ছাড়াই ভারতে বসবাস করছেন। আমরা তাদের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি যারা আমাদের প্রতিবেশী কিছু দেশ থেকে অতীতে ভারতে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, গুরুত্বপূর্ণ হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার সময়কাল, যখন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত বাংলাদেশের চরিত্র পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল।
সীমান্ত নিয়ে বলা হয়, আমাদের মধ্যকার ৪১০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা একটি জটিল সীমান্ত কারণ এটি জনবহুল এলাকা ছাড়াও বন, নদী এবং মাঠের মধ্য দিয়েও গেছে। দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ক্রিয়াকলাপের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে যেমন মাদক ও গবাদি পশু চোরাচালান রয়েছে, তেমনি রয়েছে শুল্ক এবং সাধারণ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের আওতায় থাকা পণ্য চোরাচালানও।
দু’দেশেরই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যকার নীতি হচ্ছে সীমান্তে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধ করার পাশাপাশি সীমান্তে শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ স্থিতি বজায় রাখার জন্য একটা আন্তরিক ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক চর্চা করা। যদিও সীমান্তরক্ষী বাহিনী কখনোই অপরাধ দমনের জন্য সুসম্পর্কের উপর নির্ভর করতে পারে না, কারণ মানুষ সেখানে অপরাধপ্রবণ। গত দুই বছরে সহিংস ঘটনা বেড়েছে কারণ আমাদের সীমান্ত বাহিনীর ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা চোরাচালানকারী এবং তাদের সহযোগীদের মরিয়া করে তুলেছে।
যার মানে হল বিএসএফ এর কিছু টহল দল দু’দেশের পাচারকারীদের সহিংস আক্রমণের স্বীকার হয়ে আসছে। সরকারের নির্দেশের প্রেক্ষিতে, বিএসএফ একটি নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে যেটি হলো শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করা। সতর্ক করা, ফাঁকা গুলি করার মতো অন্যান্য প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো দ্বারা তাদের উপর আক্রমণকারী চোরাকারবারীদেরকে বিরত করতে ব্যর্থ হলে তখনই শুধু বিএসএফ সদস্যরা তাদের জীবন বাঁচাতে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়।
শিগগির তিস্তা নিয়ে খুশির খবর রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির একটি দ্রুত ও পারস্পরিক-গ্রহণযোগ্য সমাধানে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা জানি, সীমান্তের উভয় পাশেই এটি একটি আবেগের বিষয়, তবে এই বিষয়ে আমাদের সরকারের প্রতিশ্রুতি কমেনি। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা অনুযায়ী, চুক্তিটি কেবলমাত্র সকল অংশীদারদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা যেতে পারে। তবে ইতোমধ্যে আমরা আমাদের অন্যান্য অভিন্ন নদীগুলির পানিবণ্টন এগিয়ে নিতে পারি, যাতে উভয় পক্ষের লোকেরা আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব থেকে উপকৃত হতে পারে।
ভারতীয় ভিসা সম্পর্কে বলা হয়, বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের ভিসা সহজীকরণকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছি। ঢাকায় হাইকমিশনার থাকাকালীন আমরা ভিসার জন্য অপেক্ষার সময় শূন্যে নামিয়ে এনেছিলাম এবং আমরা যে সব এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ ছিল তা অপসারণের জন্যও জোর দিয়েছিলাম। যার কারণে আমাদের বাংলাদেশী বন্ধুরা উত্তর-পূর্ব ভারতে নিকটবর্তী পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে যেতে পারত না।
আজ বাংলাদেশে আমাদের সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিসা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গত বছর আমরা আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুদের ভারত ভ্রমণের জন্য ১৬ লাখের বেশি ভিসা দিয়েছি। আমরা সমস্ত প্রবীণ নাগরিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দিচ্ছি। বাংলাদেশি রোগীরা নিয়মিত ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতীয় হাসপাতালগুলোতে যেতে পারেন। হাসপাতালে ভর্তি এবং অপারেশন করার প্রয়োজন না হলে আলাদা মেডিকেল ভিসার প্রয়োজন নেই। আমরা সারা বাংলাদেশ জুড়ে ১৫টি ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি) চালু করেছি। একজন বাংলাদেশি নাগরিক এই ১৫টি আইভিএসির যে কোনটিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।