খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার গাজিনগরে বিজিবির গুলিতে চারজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় বিজিবির বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নিহত মো. মফিজ মিয়ার ছেলে মো. মানিক মিয়া।
এদিকে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় অভিযোগ করতে যাননি বলে দাবি করেছেন মাটিরাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দিন ভূঁইয়া।
বিজিবির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ করে নিহত মো. মফিজ মিয়ার ছেলে মো. মানিক মিয়া জয়নিউজকে বলেন, আমি পিতাসহ স্বজনদের দাফন ও গুলিবিদ্ধ ভাইয়ের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে বিজিবির বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে পুলিশ আমাদের মামলা না নিয়ে বের করে দেন। এসময় আমার সঙ্গে ছিলেন পৌরসভার কাউন্সিলর আলাউদ্দিন লিটন। এ মামলায় বিজিবির হাবিলদার মো. ইসহাক আলীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
৩ মার্চ সংগঠিত ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে মাটিরাঙা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক বলেন, গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষ হয়নি, নিজের বাগানের দুটি কাঠাল গাছ কাটার অপরাধে দুটি পরিবারের চারজনকে গুলি করে হত্যা করেছে বিজিবি। যার গুলিতে মানুষ মরলো, সে আবার মিথ্যা মামলার বাদী এমন মন্তব্য করে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের মামলাটি গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
মাটিরাঙা পৌরসভার কাউন্সিলর মো. এমরান হোসেন বিজিবিরি বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে সাধারণ মানুষ ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। মানুষ বনে জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছে। এ ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতংকের পাশাপাশি ক্ষোভ বিরাজ করছে। মানুষ এ অন্যায়ের বিচার চায়।
বিজিবির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হলেও গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি দাবি করে মামলা মাটিরাঙা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বিজিবির পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা গ্রহণ করা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর পক্ষে নিহত মফিজ মিয়ার ছেলে মানিক মিয়ার অভিযোগ গ্রহণ না করায় পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মাটিরাঙা জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ ক্ষোভ যেকোন সময় বিক্ষোভে পরিণত হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) জনৈক চান মিয়ার বাগানের চার টুকরা কাঠাল গাছ পরিবহনকালে মাটিরাঙার গাজিনগরে বিজিবি বাধা দেয়। একসময় গাছগুলো বিজিবি নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে যেতে চাইলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে বিজিবি এলোপাথারী গুলি করে। এসময় ঘটনাস্থলেও মারা যান সাহাব মিয়া প্রকাশ মুছা মিয়া ও তার ছেলে আকবর আলী।
এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন খান, স্থানীয় আহাম্মদ আলী, মফিজ মিয়া ও হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান সাহাব মিয়ার আরেক ছেলে আহাম্মদ আলী ও বিজিবি সদস্য শাওন খান।
একইদিন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আহাম্মদ আলীর শ্বশুর মো. মফিজ মিয়া।