সাংবাদিক আরিফের বাসায় শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে চালানো হয় অভিযান। এই অভিযান, মারধর, কারাগারে আরিফের বক্তব্যসহ পুরো বর্ণনা তুলে ধরেছেন তাঁর স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু।
নিতু একটি গণমাধ্যমকে জানান, মধ্যরাতে কয়েকজন আমাদের বাসার দরজায় ধাক্কা দেন এবং দরজা খুলতে বলেন। আরিফ তাদের পরিচয় জানতে চান। কিন্তু আগন্তুকরা পরিচয় দেননি। এরপর আরিফ কুড়িগ্রাম থানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু থানা থেকে জানানো হয়, আরিফের বাসায় তারা কোনো অভিযানে যাননি। এরমধ্যেই আগন্তুকরা দরজা ভেঙে আমাদের বাসায় ঢুকে যায়।
বাসায় কোনো তল্লাশি অভিযান চালানো হয়নি উল্লেখ করে নিতু বলেন, সশস্ত্র অবস্থায় ৬-৭ জন ছিল। তাদের সঙ্গে ছিল আরও ১৫-১৬ জন আনসার সদস্য। তারা বাসায় ঢুকেই আরিফকে মারতে শুরু করে। আরিফ এর কারণ জানতে চাইলেও তারা মারধর বন্ধ করেনি। এসময় তারা গুলি করারও হুমকি দেয়।
নিতু বলেন, আমাদের বাড়ির বাইরে আরও ৪০-৫০ জন দাঁড়িয়েছিল। আশপাশের লোকজন যাতে ঘর থেকে বের হতে না পারে সেজন্য প্রতিটি বাড়ির গেটের সামনে দুই-চারজন করে দাঁড়িয়েছিল।
ঘটনার সময় বাড়িতে তাদের দুই শিশুসন্তান ছাড়া আর কেউ ছিল না উল্লেখ করে নিতু বলেন, আরিফকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এডিশনাল এসপি ও ওসি সাহেব আমাদের বাসা পরিদর্শন করেছেন। তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানানো হয়, আরিফের কাছ থেকে মাদক পাওয়া গেছে। তাই রাত ২টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাত আড়াইটার দিকে তাকে কুড়িগ্রাম কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নিতু বলেন, ডিসি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন- আমাদের বাসা থেকে আধা বোতল মদ এবং দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। অথচ আরিফ মদ-গাঁজাতো দূরে থাকুক কখনো পান-সিগারেটও স্পর্শ করেনি।
আমাদের ঘরে ওরা কোনো সার্চ করেনি। তাহলে মাদক পাওয়া গেল কোথা থেকে। কোন অপরাধে আরিফকে কারাদণ্ড দেওয়া হলো। দেশে কি আইন নেই- প্রশ্ন করেন নিতু।
নিতু অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নিউজ করায় অনেক আগে থেকেই আরিফকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েই তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে শনিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে কুড়িগ্রাম কারাগারে সাংবাদিক আরিফের সঙ্গে দেখা করতে যান নিতু। সেখানে আরিফ জানান, মধ্যরাতে তাকে বাসা থেকে জোর করে তুলে আনার পথে জেলা প্রশাসক কার্যালয় পর্যন্ত লাথি-থাপ্পড়-ঘুষি মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তার দুই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
নিতু বলেন, আরিফ আমাকে বলেছে যারা তাকে নির্যাতন করেছে তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তাদের দেখতে না পারলেও তাদের সবার গলার স্বর তার চেনা।
নিতু আরও বলেন বলেন, আরিফ এখন খুব অসুস্থ। সে ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছে না।
হাইকোর্টে রিট
মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড প্রদানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে বিবাদী করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১৭ জনকে।
রোববার (১৫ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদের পক্ষে রিটটি দায়ের করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।
রিটে ফৌজদারি কার্যবিধি, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৫ এবং ৩৬ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজ নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে নিউজ করেন বাংলা ট্রিউবনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। এর পর থেকেই ডিসির রোষাণলে পড়েন আরিফ।
জয়নিউজ